বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের ‘হিমালয় জয়ের’ সামনে নেপাল-বাধা

সাফ ফাইনাল আজ

দেশ স্পোর্টস ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের ‘হিমালয় জয়ের’ সামনে নেপাল-বাধা

ট্রফির সঙ্গে দুই অধিনায়কের ছবি তোলার আনুষ্ঠানিকতার পালা। দশরথ স্টেডিয়ামের সবুজে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রফিটা প্রথম ছুঁলেন সাবিনা খাতুন। সবারই তা চোখে পড়ল, বুঝতে পেরে লাজুক হাসি ফুটে উঠল বাংলাদেশ অধিনায়কের মুখে। তবে সাবিনার ওই স্বতস্ফূর্ত মুহূর্তটিতেই যেন ফুটে উঠল, এই ট্রফি জয়ের তাড়না কতটা তীব্র তাদের!

মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম শিরোপার সেই দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা থেকে স্রেফ এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে এখন বাংলাদেশ।

ট্রফির পাশে ছবি তোলার সময় হাসি ছিল নেপাল অধিনায়ক আঞ্জিলা থাম্বাপো সুব্বার মুখেও। হতাশার অনেক প্রহর পেরিয়ে আবার তারা আসতে পেরেছে আক্ষেপ ঘোচানোর এই মঞ্চে।

এবার নিয়ে পঞ্চমবার সাফের ফাইনালে খেলছে নেপাল। আগের প্রতিবারই ভারতের কাছে হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে তারা। এতবার না হলেও স্বপ্নভঙ্গের অতীত সঙ্গী বাংলাদেশেরও। ২০১৬ সালে শিলিগুঁড়িতে ফাইনালে হেরেছিল তারা সেই ভারতের কাছেই।

আগের সব সাফে বিজয়ী ভারত এবার বিদায় নিয়েছে সেমি-ফাইনাল থেকে। এবার ফাইনালে ওঠার পথে গ্রুপ পর্বে ভারতকে প্রথমবার হারিয়েছে বাংলাদেশ। নেপাল প্রথমবার ভারতকে হারানোর স্বাদ পেয়েছে সেমি-ফাইনালে। সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকাল সোয়া ৫টায় প্রথম শিরোপা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামের আঙিনায় নামবে দুই দল।

দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ তো বটেই, কোনো ম্যাচেই নেপালকে এখনও পর্যন্ত হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ৮ ম্যাচে হার ৬টিতেই, ড্র দুটি।

সাফের সবশেষ দেখায় ২০১৯ সালে বিরাটনগরে সেমি-ফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে  ৩-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে নেপালে এসে খেলা দুই ম্যাচের একটিতে ছিল ২-১ ব্যবধানের হার, অন্যটি হয়েছিল গোলশূন্য ড্র।

তবে সংখ্যার এসব পিছুটানকে পাত্তাই দিচ্ছেন না বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। টানা চার জয়, প্রতিপক্ষের জালে ২০ গোল দেওয়া, নিজেদের জাল অক্ষত  থাকা, এবার এই অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যানকে সঙ্গীকে করে ফাইনালে এসেছে তার দল। বিশেষ করে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার তৃপ্তি তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে দারুণ কিছুর।

একই স্বপ্ন নেপাল কোচ কুমার থাপার চোখেও। ২০১৬ সালে শিলিগুঁড়িতে তার দলকে সেমি-ফাইনাল থেকে ছিটকে দিয়েছিল ভারত। এবার সেমি-ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শিরোপা লড়াইয়ে উঠেছে তার দল। ঘরের মাঠের ফাইনালে দর্শক সমর্থন হবে তাদের বড় প্রেরণা। বাংলাদেশকে অবশ্য ঠিকই সমীহ করছেন তিনি।

৪০টি আন্তর্জাতিক গোল করা সাবিত্রা ভান্ডারি ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠে শনিবার পুরোদমে অনুশীলন করায় নেপালের আক্রমণভাগ ফিরে পেয়েছে পুরো শক্তি।

বাংলাদেশ তাতে ভড়কে যাচ্ছে না। আঁখি-মারিয়া-সাবিনাদের নিয়ে উপভোগ্য ফুটবলের পসরা মেলে বাজিমাত করতে চান বাংলাদেশ কোচ ছোটন। প্রতিপক্ষ দলের সাবিত্রার মতো বাংলাদেশের আক্রমণভাগেও আছে গোলমেশিন সাবিনা খাতুন। লাল-সবুজ জার্সিতে ৩২টি গোলের ৮টিই এবারের সাফে করেছেন সাবিনা। এর মধ্যে আছে দুটি হ্যাটট্রিক।

ছোটনের কিছুটা দুঃশ্চিন্তা সিরাত জাহান স্বপ্নাকে নিয়ে। ভারতের জালে দুটি এবং ভুটান ম্যাচে গোলের দেখা পাওয়া এই ফরোয়ার্ডের ডান পায়ের চোট সেরে ওঠেনি এখনও। ফাইনালে স্বপ্নাকে খেলানো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত স্বপ্না খেলতে না পারলেও দলের বাকিদের উপর আস্থার কমতি নেই তার।

ইতিহাস গড়তে মুখিয়ে থাকা দুই দলের মধ্যে নেপালের শক্তির জায়গা খেলা হবে তাদের মাঠে, ফলে সমর্থকদের পাশে পাবে তারা। ভারত ম্যাচে হাজার সাতেক দর্শকের চিৎকারে-উল্লাসে অনিতা-গীতাদের উজ্জীবিত করে রেখেছিল সারাক্ষণ।

সবকিছু মিলিয়ে রোমাঞ্চের দোলা আর আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়ায় দল প্রস্তুত শেষের লড়াইয়ের জন্য।


সর্বশেষ

উপরে নিয়ে চলুন