ফুটবলে কলম্বিয়া যেমন হারতে ভুলে গেছে, টানা ২৫ ম্যাচ অপরাজিত তারা। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত নিজেদের খুঁজে ফিরছে ব্রাজিল। সর্বশেষ প্যারাগুয়েকে উড়িয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও দরিভাল জুনিয়রের দলকে ভাবাচ্ছে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে অপ্রতিরোধ্য কলম্বিয়াকে নিয়ে। কোপা আমেরিকায় গ্রুপসেরা হতে হলে হামেস রদ্রিগেজদের বিপক্ষে জিততেই হবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। লাতিন আমেরিকার দুই দেশের লড়াই বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় শুরু হবে।
কলম্বিয়া সর্বশেষ হেরেছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আর্জেন্টিনার কাছে। এর পরের পথচলায় নেস্তর লরেনজোর দলের সামনে পাত্তা পায়নি ব্রাজিলও। ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এই ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল তারা। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র-অ্যালিসন বেকারদের প্রথমবারের মতো ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচে হারানোর হাতছানি কলম্বিয়ার সামনে। একই সঙ্গে ২০১৯ সালের পর কোপা আমেরিকায় প্রথমবার গ্রুপ পর্বে টানা তিনটি ম্যাচ জয়ের সুযোগ।
এই ভবিষ্যদ্বাণী যদি সত্য হয়, তাহলে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা থেকে ব্রাজিলের বিদায় ঘণ্টাও বেজে যেতে পারে। গ্রুপ ‘ডি’তে ২ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে কলম্বিয়া, দুইয়ে থাকা ব্রাজিলের পয়েন্ট ৪। এই গ্রুপের বাকি দু’দলের মধ্যে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে প্যারাগুয়ের। কাগজে-কলমে রেশমি সুতার মতো ঝুলে আছে কোস্টারিকার কোয়ার্টারের ভাগ্য। যে কোস্টারিকার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল সেলেকাওরা, সেই দলটিকেই ৩-০ গোলে হারিয়ে শুধু নিজেদের জয়ের সংখ্যাই বাড়ায়নি কলম্বিয়া, উঠে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
ব্রাজিলের সঙ্গে ড্র করা কোস্টারিকার পয়েন্ট ১। তবে গোল পার্থক্যে কোস্টারিকার (-৩) চেয়ে ব্রাজিলের (+৩) অবস্থান পুষ্টকর। বুধবার কোস্টারিকা যদি চার গোলে প্যারাগুয়েকে হারায় আর ব্রাজিল যদি কলম্বিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হারে, তাহলে ২০১৬ সালের পর কোপা আমেরিকার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হবে সেলেকাওদের। গাণিতিক হিসাব সমীকরণ জটিল বলে অনেকেই ব্রাজিলকে কোয়ার্টার ফাইনালে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু কলম্বিয়ার বিপক্ষে যদি ড্র করে, তাহলে শেষ আটে দরিভল জুনিয়রের দলের খেলা হতে পারে উরুগুয়ের সামনে। হারতে ভুলে যাওয়া কলম্বিয়াকে থামাবে ব্রাজিল– বিশ্বাস দলটির কোচ দরিভাল জুনিয়রের।
প্রতিপক্ষের অবিশ্বাস্য পথচলায় ইতি টানার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী তিনি, ‘আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য খুব উঁচু মানের একটা ম্যাচ হবে। যেখানে এসব খেলোয়াড় একে অপরের মুখোমুখি হবে, যারা কিনা একে অন্যকে চিনে এবং প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলেও বেশ। দল দুটি ভিন্ন ভিন্ন মুহূর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে আমার কোনো সন্দেহ নেই, ব্রাজিল সর্বোচ্চ স্তরের পারফর্ম করবে। আর আমি আশা করি, এটিই হবে আমাদের প্রথম দুই ম্যাচের চেয়ে ভালো একটি ম্যাচ।’
কলম্বিয়ার মেইন ইঞ্জিন হামেস রদ্রিগেজ। কোস্টারিকার বিপক্ষে তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। ক্লাব পর্যায়ে ততটা আলোকিত না হওয়া রদ্রিগেজ দেশের জার্সিতে বরাবরই দুর্দান্ত। তাঁর সেট পিসগুলো বিপজ্জনক। নিজেদের সর্বশেষ দুই ম্যাচেই সেট পিস থেকে গোল করেছে কলম্বিয়া। ব্রাজিলকে আবার এই সেট পিস প্রতিহত করার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যায় পড়তে দেখা গেছে। কর্নার এবং ক্রসের ক্ষেত্রে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এলোমেলো হতে দেখা গেছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান এবং পারফরম্যান্সে কলম্বিয়ার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও মুখোমুখি লড়াইয়ে দু’দলের মধ্যে ব্যবধান কিন্তু অনেক। ৩৬ বারের লড়াইয়ে ব্রাজিল জিতেছে ২১ ম্যাচে, কলম্বিয়া ৪টিতে। বাকি ১১ ম্যাচ হয়েছে অমীমাংসিত।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে একাদশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারেন ব্রাজিল কোচ দরিভাল। কার্ডের ঝুঁকি থাকার কারণে শুরুর একাদশে ভিনিসিয়ুস, এদের মিলিতাও, ওয়েনডেল, লুকাস পাকুয়েতাকে নাও রাখতে পারেন ব্রাজিল কোচ। কলম্বিয়ারও বেশ কয়েকজন ফুটবলার আছেন কার্ড ঝুঁকিতে। যে কারণে দু’দলের কোচ একাদশ সাজানো নিয়ে আছেন মধুর সমস্যায়।