অধুনা বিশ্বজুড়ে এতো বেশি টি-টোয়েন্টি হচ্ছে যদ্দরুন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে নতুনভাবে কোন উম্মাদনা কাজ করছে না ক্রিকেটপ্রেমীদের। তার উপর অনেকটা সাদামাটাভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শুরু হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই তো কি হয়েছে! ক্রিকেট যে দিনশেষে মাঠেরই খেলা, মাঠের পারফরম্যান্সেই এর আসল সৌন্দর্য্য– সেটাই যেন জানান দিলো আইসিসির দুই সহযোগী দেশ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র। সহযোগী দেশ হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৯৪ রান তুলেছিল কানাডা, যা যুক্তরাষ্ট্র ১৪ বল এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই জিতেছে। এতে হয়ে গেল বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচে জয়সহ একঝাঁক রেকর্ড!
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল ১৬৯। আর নতুন রেকর্ড গড়ার জন্য মোনাঙ্ক প্যাটেলের দল বেছে নিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচকেই। সেটা নিজেদের আর টুর্নামেন্টেরও।
ডালাসে কানাডার করা ৫ উইকেটে ১৯৪ রান যুক্তরাষ্ট্র টপকে গেছে ১৪ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখে। যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সহযোগী দেশগুলো মধ্যে রান তাড়ার রেকর্ডও।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রেকর্ড গড়ার দিনের মূল নায়ক অ্যারন জোন্স। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ২২ বলে ফিফটি করেন জোন্স, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। তাঁর এই ইনিংসেই মূলত পুরো ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেয়। ১০ ছক্কায় ৪০ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংস খেলেন জোন্স। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন তিন নম্বরে খেলা আন্দ্রিস গুস।
ইনিংসের প্রথম ২৫ বলে ২৫ রান করা গুস ফিফটি করেন ৩৯ বলে। এই দুজনে গড়েন ৫৮ বলে ১৩১ রানের অবিশ্বাস্য জুটি। ওভারপ্রতি এই জুটি তুলেছে ১৪.২৯ রান করে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শতরানের জুটিতে এর চেয়ে দ্রুতগতিতে রান তুলতে পারেনি আর কোনো জুটি। ৪৬ বলে ৬৫ রান করে আউট হন গুস।
অথচ বল হাতে কী দুর্দান্ত শুরুটাই না করেছিল কানাডা। প্রথম ৭ ওভারে যুক্তরাষ্ট্রকে মাত্র ৪৫ করতে দেয় তারা, তুলে নেয় ২ উইকেট। অর্থাৎ শেষ ১৩ ওভারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল ১৫০ রান। অষ্টম ওভারে কানাডা অধিনায়ক সাদ বিন জাফর ৩ রান দিলে সমীকরণ দাঁড়ায় ১২ ওভারে ১৪৭ রানের। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় এই অসম্ভব সমীকরণ মিলিয়ে ১৪ বল বাকি থাকতেই মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে পৌঁছে যায় জয়ের লক্ষ্যে। তাতে কানাডার বোলারদের অতিরিক্ত রান দেওয়া ও ফিল্ডারদের ব্যর্থতারও ‘অবদান’ ছিল।
বোলিংয়ের মতো ব্যাট হাতেও দারুণ শুরু পেয়েছিল কানাডা। ডালাসে টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে দারুণ শুরু পায় তারা। দুই ওপেনার অ্যারন জনসন ও নবনীত ঢালিওয়াল মিলে গড়েন ৩২ বলে ৪৩ রানের জুটি। জনসন ১৬ বলে ২৩ রানে আউট হলেও টুর্নামেন্টের প্রথম ফিফটি করেন ঢালিওয়াল। ৩৬ বলে ফিফটি করা ঢালিওয়াল চার নম্বরে উইকেটে আসা নিকোলাস কার্টনের সঙ্গে ৩৭ বলে ৬২ রানের জুটি গড়েন।
৪৪ বলে ৬১ রান করে ঢালিওয়াল যুক্তরাষ্ট্রের অলরাউন্ডার কোরি অ্যান্ডারসনের বলে আউট হন। তবে ২৮ বলে ফিফটি করে রান ঠিকই বাড়াতে থাকেন কার্টন। শেষ দিকে শ্রেয়াস মোভার ১৬ বলে ৩২ রানের ইনিংসে ১৯৪ রানের সংগ্রহ পায় কানাডা। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে স্পিনার হারমিত সিং ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন।
প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা দলটি প্রথম ম্যাচেই ভেঙে দিয়েছিল নেদারল্যান্ডের রেকর্ড। তাদের তোলা ১৯৪ রান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ২০১৪ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের ৪ উইকেট ১৯৩ রান। তবে শেষ পর্যন্ত কানাডার রেকর্ডও ভেঙে দিয়ে ম্যাচ জিতে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।