একটানা ছয় ম্যাচ হারার পর সপ্তম ম্যাচে ১৪৯ রানের বিশাল ব্যবধানে রাজশাহীকে হারিয়ে প্রথম জয়ের মুখ দেখেছিল ঢাকা ক্যাপিটালস। এরপর চট্টগ্রামে এসে আবারও পরাজয়। এ যেন হারের সঙ্গে দারুণভাবে মিতালী করে ফেলা ঢাকা ক্যাপিটালস বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) অবশেষে দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেল। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নিজেদের নবম ম্যাচে ঢাকা ৬ রানের হারায় সিলেট সিক্সারকে, অষ্টম ম্যাচে সিলেটের এটি ষষ্ঠ হার।
১৯৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সিলেট ৩২ রানেই হারিয়ে ফেলে জর্জ মানসে ও জাকির হাসানকে। তবে, অন্যপ্রান্তে রানের চাকা সচল রেখে সিলেটের আশা জাগিয়ে রাখিয়েন রনি তালুকদার। অ্যারন জোন্সকে নিয়ে গড়ে তোলেন ৮০ রানের জুটি। তখনই বল হাতে দৃশ্যপটে হাজির ঢাকার দলনেতা পেরেরা। ১৪ রানের ব্যবধানে প্রথমে ৩২ বলে ৩৬ রান করা জোন্সকে ফেরান কট অ্যান্ড বোল্ড করে। পেরেরা সিলেটকে বড় ধাক্কা দেন রনি তালুকদারকে আউট করে। ৪৪ বলে ৯ চারে ৬৮ রান করা রনিকে স্লোয়ার বলে বোল্ড আউট করে সিলেটের আশার বাতিতে পানি ঢেলে দেন এ লঙ্কান ক্রিকেটার।
জোন্স-রনির বিদায়ের পর সিলেটের শেষ ভরসা হিসেবে ২২ গজে লড়াই চালিয়ে যান জাকের আলী অনিক ও দলনেতা আরিফুল হক। দু’জনই দলের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাটিং করে ঢাকার কপালের চিন্তার ভাঁজ বাড়াতে থাকেন। এক পর্যায়ে লড়াই গিয়ে দাঁড়ায় শেষ ২ ওভারে, অর্থাৎ ১২ বলে সিলেটকে করতে হবে ৪০ রান। জাকের আলী অনিক ১৯তম ওভারে আক্রমণে আসা মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধের প্রথম তিন বলই করেন সীমানা ছাড়া। কিন্তু চতুর্থ বলে পেরেরার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অনিক। আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ৫ চারে ১৩ বলে ২৮ রান। মুগ্ধের সেই ওভারের শেষ বলে আরিফ চার হাঁকালে শেষ ওভারে সিলেটের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩ রান।
মোস্তাফিজের করা প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে লড়াইয়ের আভাস দেন সিলেটের সামিউল্লাহ শিনাওয়ারি। পরের বলটি ওয়াইড, পঞ্চম বলটি আবারও বাউন্ডারি ছাড়া করেন শিনাওয়ারি। তৃতীয় বলটি ফুলটস পেয়েও ১ রানের বেশি নিতে পারেননি তিনি। চতুর্থ বলটিও ছিল ফুলটস, সেটি প্যারিস্কুপে বাউন্ডারি ছাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন আরিফুল। আউট হওয়ার আগে আরিফুল ১৩ বলে একজোড়া চার ও তিন ছয়ে ২৯ রান করেন। শেষ ২ বলে ১১ রানের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান শিনওয়ারি। ফলে শেষ বলে ৪ হাঁকানোর পরও ১১ রানের সমীকরণ আর মেলানো সম্ভব হয়নি সিলেটের পক্ষে। ঢাকার পক্ষে থিসারা পেরেরা ও মোস্তাফিজ শিকার করেন ২টি করে উইকেট।
এদিকে বিপিএলে দ্বিতীয় জয়ের লক্ষ্যে নবম ম্যাচ খেলতে নেমে সিলেটের বিপক্ষে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নামে ঢাকা ক্যাপিটালস্। সুমনের করা প্রথম ওভারেই ১১ রান তুলে ঢাকার সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণের কাজ শুরু করে তানজিদ তামিম ও লিটন দাস। দ্বিতীয় ওভারে সিলেটের রুয়েলের ওভার থেকে ৪ রানের বেশি নিতে না পারলেও তৃতীয় ওভারে আবারও সুমনের ওপর চড়াও হন তামিম। সেই ওভারে তুলে নেন ১২ রান। পেস আক্রমণ একদিক থেকে বন্ধ রেখে সিলেট অধিনায়ক চতুর্থ ওভারেই বল তুলে দেন বাঁহাতি স্পিনার টিপু সুলতানের হাতে। তার ওভারে মাত্র ১ রান খরচ করেই তুলে নেন আক্রমণে নেতৃত্ব দেওয়া ইনফর্ম ব্যাটার তানজিদ তামিমকে।
স্পিনে সফলতা দেখে পরের ওভারেও লেগ স্পিনার অ্যারন জোননকে ডেকে আনেন সিলেট অধিনায়ক আরিফুল হক। যুক্তরাষ্ট্রের লেগ স্পিনার অ্যারনের সেই ওভার থেকে লিটন ৩টি চার আর ১টি ছক্কায় তুলে নেন ১৯ রান। তাতে করে লিটনও জানিয়ে দেন আজকের দিনটি তার হতে যাচ্ছে। নামিবিয়ার জেপি কোটজকে মাত্র ৯ রানে আউট করে ঢাকার দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন আফগান লেগি সামিউল্লাহ শিনওয়ারি। ব্যাটিংয়ে প্রমোশন দিয়ে ঢাকা ক্যাপিটালস চার নম্বরে নামান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। কিন্তু তাকেও সাজঘরে ফেরত পাঠান ওই শিনওয়ারি। তবে, অন্যপ্রান্তে ঠিকই অবিচল ছিলেন লিটন। তিনি আক্রমণে কিছুটা গতি কমিয়ে আনলেও অপরপ্রান্তে সাব্বির রহমান নিজস্ব স্টাইলে চালিয়ে খেলেন। তাতে করে তরতর করে বাড়তে থাকে ঢাকার সংগ্রহ। জোড়া ছয়ে ২১ বলে ২৪ রান করে সাব্বির আউট হলেও ৩৮ বলে ফিফটি করে দলের রানের চাকা সচল রাখেন লিটন।
সাব্বিরের বিদায়ের পর ঢাকার অধিনায়ক থিসারা পেরেরার সঙ্গে মাত্র ২৭ বলে ৮১ রানের পার্টনারশিপ গড়েন লিটন। এরমধ্যে ৪টি করে চার ও ছয়ে ৪৮ বলে ৭০ রান করে আউট হয়ে যান লিটন। ইনিংসের শেষ ওভারে ৪ বল বাকি থাকতে আউট হয়ে যান থিসারাও। ততক্ষণে তিনি ৩ চার আর ৩ ছয়ে মাত্র ১৭ বলে করেন ৩৭ রান। তাতে করে ঢাকা ক্যাপিটালসের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ১৯৬ রান। সিলেটের হয়ে টিপু সুলতান ও শিনওয়ারি নেন ২টি করে উইকেট।