শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

১২ বছর পর ‘ঘরে ফেরলেন’ নেইমার, সান্তোসের রাজকীয় বরণ

দেশ স্পোর্টস ডেস্ক

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

১২ বছর পর ‘ঘরে ফেরলেন’ নেইমার, সান্তোসের রাজকীয় বরণ

এর জন্য চমৎকার স্লোগান আর হতে পারত না! ‘দ্য প্রিন্স ইজ ব্যাক।’ নেইমারের ফেরা নিয়ে সান্তোসের মূল স্লোগান এটি। ভিলা বেলমিরোয় খুব বড় একটা ইলেকট্রনিক ব্যানারেও লেখা কথাটি। আর দর্শকদের হাতে ধরা ব্যানারেও যেটা বিক্রি হয়েছে ১০ রিয়ালে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে গ্রাফিতিও আঁকা হয়েছে স্টেডিয়ামের বাইরে—নেইমারের মাথায় মুকুট। সান্তোস শহরে এটা মোটেও ছোট কোনো বিষয় নয়। যে শহরে পেলেই শেষ কথা, সেখানে ফিরে এসেছেন রাজপুত্র, অন্য অর্থে নতুন ‘রাজা’। নেইমার!

কালো ক্যাপ, কালো গেঞ্জি পরা নেইমার ছয় মাসের চুক্তিপত্রে সইয়ের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে সান্তোস শহর এবং ক্লাবটির রাজাই হয়ে গেলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ‘দ্য প্রিন্স ইজ ব্যাক’ নামে একটি ভিডিও ছেড়েছিল সান্তোস। এর আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পেলের কণ্ঠস্বরে নেইমারকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে একটি ভিডিও ছাড়া হয়েছিল। সেটারই দ্বিতীয় সংস্করণে প্রয়াত কিংবদন্তির প্রতি নেইমারকে বলতে শোনা যায়, ‘কিং পেলে, আপনার ইচ্ছা আমার জন্য নির্দেশ। সিংহাসন ও মুকুট আপনারই আছে। কারণ, আপনি চিরকালীন। কিন্তু পবিত্র ১০ নম্বর জার্সিটা পরা হবে সম্মানের, যেটা সান্তোস এবং এই পৃথিবীর জন্য অনেক কিছু। আপনার রেখে যাওয়া লিগ্যাসিকে সম্মান দিতে আমি সবকিছু করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

সান্তোস আয়োজনের কমতি রাখেনি। সবারই জানা ছিল, সৌদি আরবে আল হিলালের পাট চুকিয়ে শৈশবের ক্লাব ব্রাজিলের সান্তোসে ফিরছেন নেইমার। তাঁর জন্য স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে একটি কনসার্টও আয়োজন করেছিল ব্রাজিলের শীর্ষ লিগের ক্লাবটি। বৃষ্টির মধ্যেই ভিলা বেলমিরোর গ্যালারিতেও ঠাঁই নিয়েছিলেন প্রায় ২০ হাজার দর্শক। স্টেডিয়ামের বাইরেও ছিল ভিড়।

বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতে প্রায় তিন ঘণ্টার এ অনুষ্ঠানে পা রাখার আগে ব্রাজিলের স্থানীয় সময় সকালে সাও পাওলোয় অবতরণ করে নেইমারের ব্যক্তিগত বিমান। কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে হেলিকপ্টারে করে সান্তোসে ফিরেছেন ৩২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। মাঠের মাঝে মঞ্চ সাজানোই ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই মঞ্চে উঠেছেন নেইমার। দর্শকদের প্রতি হাত নেড়েছেন। ঘরের ছেলেকে দর্শকেরাও বরণ করেছেন স্লোগানসূচক অভ্যর্থনায়। মাটিতে মাথা ও হাত নুইয়ে নিজের বিখ্যাত গোল উদ্‌যাপন ভঙ্গিমার পর সান্তোসের মাটিতে চুমুও খেয়েছেন। ‘নেইমার মিথ’–এর জন্ম তো ভিলা বেলমিরোর ওই মাটিতেই।

নেইমার সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকতেই দর্শকেরা তাঁর পায়ে ড্রিবলিং দেখতে চেয়েছিলেন। উত্তরে নেইমার বলেছেন, ‘আমি খুবই সুখি। এখানে দারুণ সময় কেটেছে। সামনে তেমন সময় আরও আছে। (ড্রিবল করতে) সাহসের অভাব হবে না।’

নেইমারের চুক্তি নিয়ে সান্তোসের সহসভাপতি ফার্নান্দো বোনাভিদেস ক্যানাল স্পোরটিভিকে বলেছেন, ‘এই চুক্তিপত্র প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের। কিন্তু তাকে ধরে রাখতে আমরা সব রকম চেষ্টাই করব। আমরা যেটা চাচ্ছি, সে যেন আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকে।’

২০২৬ বিশ্বকাপ? ব্রাজিলের জার্সিতে এটাই নেইমারের শেষ সুযোগ। সে জন্য ব্রাজিলের জার্সিতে ফিরতে হবে আগে। দরকার ছিল নিয়মিত ম্যাচ খেলার, যেটা আল হিলালে হচ্ছিল না। সান্তোসে সেই সুযোগ পাবেন নেইমার। বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে বলেছেন, ‘আমি জাতীয় দলে ফিরতে চাই। অর্জনের জন্য এখনো একটি (বিশ্বকাপ) মিশন বাকি আছে, যেটা আমার শেষ সুযোগ বলে মনে করি। যা–ই হোক না কেন, আমি এটার পেছনে ছুটব।’

সংবাদ সম্মেলনে সান্তোসে ফেরার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন নেইমার, ‘কিছু সিদ্ধান্ত থাকে, যেটা ফুটবলীয় চুক্তির বাইরে। আল হিলালে ভালোই ছিলাম। পরিবার ভালো ছিল। কিন্তু কিছু ঘটনায় সিদ্ধান্তটি নিতেই হলো। অনুশীলনে নিজেকে অসুখী লাগছিল। ফেরার সুযোগটা পেয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার ভাবিনি।’ ফেরার পর কেমন লাগছে, সেটাও বলেছেন নেইমার, ‘এখানে পা রাখার পর থেকেই মনে হচ্ছে, ১৭ বছর বয়সে ফিরে গেছি। খুব ভালো লাগছে এবং খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।’

সান্তোসের বয়সভিত্তিক দলে বেড়ে ওঠা নেইমারের। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ক্লাবটির মূল দলে। এরপর ইউরোপযাত্রা। প্রথমে বার্সেলোনা এরপর পিএসজি হয়ে দেড় বছর আগে সৌদি আরবের আল হিলালে। তবে ব্রাজিল ছাড়ার সাড়ে ১১ বছর পর আবারও সান্তোসে ফিরে নেইমার যেন ক্যারিয়ারের চক্রই পূরণ করলেন। এর মধ্যে অনেকবার চোটে পড়েছেন। মৌসুমে নিয়মিত মাঠেও নামতে পারেননি। আগের সেই ধার আছে কি না, সান্তোস ঠিক নিশ্চিত না হলেও ঘরের ছেলেকে সেই আগের মতো হৃদয় দিয়েই বরণ করে নিয়েছেন ক্লাবটির সমর্থকেরা। পার্থক্য একটাই, প্রথম দফায় খেলেছেন ১১ নম্বর জার্সিতে, এবার ১০ নম্বর। প্রথম আলো অবলম্বনে।


সর্বশেষ

উপরে নিয়ে চলুন