শেষ ম্যাচ জিতলেও আর সিরিজ নিজেদের করার কোনও সুযোগ নেই টাইগারদের। তাই অন্ততঃ টি-টোয়েন্টিতে আরেকবার ২০১৮ সালকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। ইতিহাস জানাচ্ছে, ২০১৮ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি ওয়ানডে সিরিজ জিতে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে এসেছিল বাংলাদেশ। তবে টি-টোয়েন্টিতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সুযোগ ও সম্ভাবনা শেষ।
ডমিনিকায় দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৫ রানের হারে শেষ হয়েছে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা। তবে আজ ৭ জুলাই গায়ানায় শেষ ম্যাচ জিতলে অন্তত হোয়াইটওয়াশ এড়ানো যাবে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল কী তা পারবে? এই প্রশ্ন সামনে রেখেই বৃহস্পতিবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তবে এসব কিছুকে ছাড়িয়ে মাঠে বিজয়ী হতে পারে বৃষ্টি। ম্যাচ হয়ে যেতে পারে ‘বৃষ্টিওয়াশ’।
বার বার বলা হচ্ছে টিম পারফরমেন্সের কথা। একটা দল হয়ে সবাই মিলে পারফর্ম করে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ঔজ্জ্বল্য ছড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন সবাই। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর পর বাংলাদেশে বসে অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনও সে তাগিদই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমরা এখনো তেমন দল হয়ে উঠিনি যে দু’একজনের অতি উঁচু মার্গের পারফরমেন্স দিয়ে বাজিমাৎ করবো।’
আমাদের ভাল করতে হলে সবাইকে ভাল খেলতে হবে। সবার কার্যকর পারফরমেন্স দিয়েই জিততে হবে; কিন্তু এ সিরিজে তার কিছুই হয়নি। যেটা হয়েছিল ৪ বছর আগে। সেবার সাকিব ব্যাট ও বল হাতে (১০৩ রান ও ৩ উইকেট) সমানভাবে জ্বলে উঠে সিরিজ বিজয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেও লিটন দাস, তামিম, মাহমুদউল্লাহরাও তাকে ব্যাকআপ করেছিলেন।
লিঠন দাস ইনিংসের সূচনা করে ১৯০ প্লাস স্ট্রাইকরেটে ৩২ বলে ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দল জেতানোর ভূমিকার পাশাপাশি হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা; কিন্তু এবার তার কিছুই হচ্ছে না। গত দুই ম্যাচে (৯ ও ৫) লিটন দাসের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১৪ রান।
শুধু লিটন দাস কেন, টপ অর্ডার আর পেস বোলিংয়ের অবস্থাও করুন। শুধু সাকিব প্রথম দিন ২৯ রান করার পর পরের ম্যাচে ষাটের ঘরে পা রেখেছেন। বাকি সবার অবস্থা খুবই খারাপ। ওপেনাররা ব্যর্থতার ঘানি টেনে যাচ্ছেন। ইনিংস শুরুর পরপরই হুড়মুড় করে ভেঙ্গে যাচ্ছে টপঅর্ডার।
এনামুল হক বিজয় (১৬+৩), মুনিম শাহরিয়ার (২), মাহমুদউল্লাহ (৮ ও ১১), আফিফ (০ ও ৩৪), সোহান (২৫ আর ৭), শেখ মাহদি (১ ও ৫) কারো ব্যাটে রান নেই।
বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া প্রথম ম্যাচে শ্রী-হীন ব্যাটিংয়ের পর পরের ম্যাচেও আলগা বোলিং এবং দায়িত্ব ও লক্ষ্যহীন ব্যাটিং করেছেন সবাই। অধিনায়ক রিয়াদও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। বোলিংও করছেন না। ব্যাট হাতেও ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। যা করার করছেন সাকিব একাই।
সাকিবের ব্যাট থেকেই কেবল একটি হাফ সেঞ্চুরি (৫২ বলে ৬৮) বেরিয়ে এসেছে। বাকিদের মধ্যে শুধু আফিফ হোসেন ধ্রুবই (২৭ বলে ৩৪) তিরিশের ঘরে পা রেখেছেন। এছাড়া প্রথম ম্যাচে উইকেটরক্ষক কাম মিডল অর্ডার সোহান ২৫ রান করেছিলেন।
বোলারদের মধ্যে বিশেষ করে পেসাররাও হালে পানি পাচ্ছেন না। ব্যাটিং সহায়ক পিচে কোনো লাইন ও লেন্থে বল ফেলবেন, তা ঠিক করতে করতেই ৪ ওভারের কোটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে দ্বিতীয় ম্যাচে তিন পেসার তাসকিন (৩ ওভারে ৪৬), মোস্তাফিজ (৪ ওভারে ১/৩৭) ও শরিফুল (৪ ওভারে ২/৪০) - তিনজন মিলে ১১ ওভারে দিয়েছেন ১২৩ রান।
ব্যাটিং এবং বোলিং দুই ডিপার্টমেন্টেই অনুজ্জ্বল পারফরমেন্স। এ অনুজ্জ্বলতা কাটিয়ে পারফরমেন্সের গ্রাফকে ওপরে টেনে তুলতে না পারলে জয়ের প্রশ্নই আসে না।
সে কাজটি করতে হবে আগে। ব্যাটারদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিকমত পালন করতে হবে। তাদের ব্যাটে রান চাই। আর বোলারদের বিশেষ করে পেসারদের বোলিং কার্যকরিতাও খুব দরকার। ক্যারিবীয়রা হাত খুলে খেলতে পছন্দ করে। আক্রমণাত্মক উইলোবাজি এবং ভাল বলকে যেখানে খুশি মারার ক্ষমতাও আছে বেশ। তাদের বিপক্ষে পেস নির্ভরতা কমিয়ে স্পিন শক্তি বাড়ানোর চিন্তাটাও যে খুব জরুরি। এ কাজগুলো ঠিকমত হলে শেষ ম্যাচে ভাল কিছু হতেও পারে।