ক্রিকেট বিশ্বে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে হিসেব করলে সবার উপরে থাকবে পাকিস্তান-ভারতের ম্যাচ। গত মাসেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে এশিয়া কাপে দু’দলের দেখা হওয়ার পর আজ আবার দেখা হচ্ছে; বিশ্বকাপের আসরে, ভারতের মাটিতে। বিশ্বকাপের ফিক্সচার হওয়ার পর থেকেই এ ম্যাচ নিয়ে ক্রিকেট ভক্তদের অপেক্ষা। দীর্ঘ সেই অপেক্ষা শেষ হবে আজ। আর শেষ হওয়ার অপেক্ষার শুরুটা হবে দুপুর আড়াইটায়। ভারতের আহমেদাবাদে ওই সময়ে মাঠে গড়াবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ম্যাচটি।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। দুই দেশের ক্রিকেট ভক্তদের তো বটেই বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে এ লড়াই নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। একটা সময় নিয়মিত তারা দেশে বিদেশে মুখোমুখি হলেও বিশেষ কারণে এখন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ ছাড়া এই দুই দলের দেখা হয় না। সে কারণে এ ম্যাচে আগ্রহের ব্যারোমিটারে পারদের উচ্চতা থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
দুই দলের দেখা হওয়াটা এখন সোনার হরিণে রূপ নিলেও দর্শকদের জন্য এ বছরটা সোনায় সোহাগা। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দল দুটো তিনবার মুখোমুখি হচ্ছে। এশিয়া কাপের বদৌলতে গত মাসে দুইবার মুখোমুখি হয়েছিল চির প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটো। আর এ মাসে বিশ্বকাপে। অথচ গত মাসে হওয়া এশিয়া কাপের আগে তারা প্রায় সাড়ে চার বছর আগে শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল।
এশিয়া কাপে ভারতের প্রাধান্য ছিল স্পষ্ট। একটা ম্যাচে পাকিস্তানকে লজ্জায় ফেলেছিল ভারত। বিশাল ব্যবধানে জিতেছিল বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ। অন্য ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে শেষ হতে পারেনি। শুধু এশিয়া কাপ নয়, সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের লড়াইয়ে ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য। একটা পরিত্যক্ত ম্যাচ বাদ দিলে গত চার ম্যাচের চারটিতে জয় ভারতের। আর শুধু বিশ্বকাপের কথা উঠলে তো পাকিস্তান লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পায়না। বিশ্বকাপে সাতবার মুখোমুখি হয়েছে দল দুটো। সাতবারই ভারতের জয়। ফলে সবার মুখে একটাই প্রশ্ন- ভারতের জয় অব্যাহত থাকবে, না এবার পাকিস্তান বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়ের মুখ দেখবে। ভারতের পক্ষে ৮-০ হবে না পাকিস্তান জিতে ৭-১ করবে।
আজকের ম্যাচ ভারত ও পাকিস্তানের দুই দলের একটা দলকে এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো হারের তিক্ত স্বাদ হজম করতে হবে। উভয় দলই এখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপে অপরাজিত রয়েছে। ভারত তাদের দুই ম্যাচেই জয়ের দেখা পেয়েছে। পাকিস্তান তাদের দুই ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে হারিয়েছে। আজ যে কোনো দলকে হারের সীমানায় ঢুকে পড়তে হবে। সে সঙ্গে অপরাজিত থাকার তকমা হারাবে।
দুই দলের লড়াইট আর আগের মতো পাকিস্তানের পেস বোলার আর ভারতের ব্যাটারদের লড়াই তা বলা যাবে না। কেননা এখন ভারতের পেস শক্তিও যথেষ্ঠ শক্তিশালী। ব্যাটাররা এ ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারবেন। ভয়ঙ্কর এক ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট নিয়ে ভারত বিশ্বকাপ উদ্ধারের মিশন শুরু করেছে। রোহিত শর্মা, ঈশান কিষান, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, শ্রেয়াস আইয়ের মতো নির্ভরযোগ্য সব ব্যাটাররা পাকিস্তান বোলিংকে তুলোধুনো করতে প্রস্তুত। সম্ভবত এ ম্যাচেও খেলা হবে না ভারতের ওপেনার শুভমান গিলের।
অন্যদিকে পাকিস্তান ব্যাটিং শক্তিকে নড়বড়ে বলা যায়। শুধু তাই নয়, দুঃশ্চিন্তার নামও দলটির এ ডিপার্টমেন্ট। আর এই দুঃশ্চিন্তার কেন্দ্রে দলটির অধিনায়ক বাবর আজম। র্যাংকিংয়ের সেরা ব্যাটার অথচ নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন তিনি। বিশ্বকাপের দুই ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন। তার মাঝে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, ইমাম উল হক, সৌদ শাকিল আর আব্দুল্লাহ শফিক। বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছেন শফিক। ফলে আজকের ম্যাচে তাকে নিয়ে আগ্রহ একটু বেশিই থাকবে।
বোলিংয়ে পাকিস্তানের নেতৃত্ব রয়েছেন শাহিন আফ্রিদি। কিন্তু তিনিও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। দুই ম্যাচে একটা করে উইকেট পেয়েছেন তিনি। বরং হঠাৎ করে সুযোগ পাওয়া হাসান আলী পাকিস্তানকে ভরসা দিচ্ছেন।
অন্যদিকে ভারতের বোলিং লাইনকে নেতৃত্বে দিচ্ছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। এছাড়া রয়েছেন হৃদিক পাণ্ডে, শার্দুল ঠাকুর, কুলদ্বীপ যাদবরা। পাকিস্তান দলে হাসান আলী ও শহীদ আফ্রিদিকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন হারিস রউফ আর মোহাম্মদ নওয়াজ।