পাকিস্তান আরও একবার বুঝিয়ে দিলো, কেন তাদের আনপ্রেডিক্টেবল বলা হয়। জেতা ম্যাচ যেমন নাটকীয়ভাবে হেরে যেতে পারে দলটি, তেমনি কোণঠাসা অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তুলে নিতে পারে অবিশ্বাস্য জয়ও।
গলে এর আগে কোনো দল যা পারেনি, সেটিই এবার করে দেখালো পাকিস্তান। লঙ্কানদের এই মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডটি ছিল ২৬৮ রানের। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই রান তাড়া করেছিল স্বাগতিকরা।
সফরকারী দল হিসেবে গলে সব থেকে বেশি রান তাড়া করে টেস্ট জয়ের রেকর্ড আরও কম। ২০২১ সালে শেষ ইনিংসে ১৬৪ রান তুলে ম্যাচ জিতেছিল ইংল্যান্ড।
পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্য ছিল ৩৪২ রানের। কোনো হিসেব-নিকেশই তাদের পক্ষে ছিল না। এমন এক ম্যাচ ইতিহাস গড়ে জিতে নিলো বাবর আজমের দল। গলে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৪ উইকেটের দুর্দান্ত এক জয় পেয়েছে আনপ্রেডিক্টেবলরা।
পাকিস্তান ইতিহাস গড়তে পারে, বোঝা যাচ্ছিল টেস্টের চতুর্থ দিন শেষেই। আবদুল্লাহ শফিকের হার না মানা সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩ উইকেটে ২২২ রানে দিন শেষ করে সফরকারীরা।
শেষ দিনে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১২০ রান, হাতে ছিল ৭ উইকেট। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে সেঞ্চুরিয়ান আবদুল্লাহ শফিক ১৪৬ বলে ৭১ রানের জুটিতে জয়ের পথ অনেকটাই সহজ করে দেন।
তবে রিজওয়ান ৪০ করে ফেরার পর অল্প সময়ের মধ্যে আরও দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে পাকিস্তান। সেই চাপ বলতে গেলে একাই কাঁধে নেন সেঞ্চুরিয়ান আবদুল্লাহ শফিক। ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন এই ওপেনার। ৪০৮ বল মোকাবেলায় তার ১৫৮ রানের ম্যারাথন ইনিংসে ছিল ৬ চার আর ১ ছক্কার মার।
পাকিস্তান জয় থেকে ১১ রান দূরে থাকতে একবার বৃষ্টিও হানা দিয়েছিল। প্রায় এক ঘণ্টা ম্যাচ বন্ধ থাকলে সফরকারীদের জয় নিয়ে তৈরি হয়েছিল শঙ্কা। তবে সেই শঙ্কা কাটিয়ে খেলা শুরু হয় অবশেষে। পাকিস্তানই হাসে শেষ হাসি।
অথচ প্রথম তিন ইনিংস শেষে শ্রীলঙ্কার পক্ষেই ঝুঁকে ছিল ম্যাচটি। লঙ্কানদের ২২২ রানের জবাবে ৮৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসেছিল পাকিস্তান। সেখান থেকে অধিনায়ক বাবর আজমের মহাকাব্যিক এক লড়াইয়ে ২১৮ পর্যন্ত যায় সফরকারীরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানরা ৩৩৭ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ গড়লে পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটা জেতা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। কঠিন সেই কাজটিই সহজে করে দিয়েছেন আবদুল্লাহ শফিক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৬৬.১ ওভারে ২২২/১০ (দিনেশ চান্দিমাল ৭৬, মাহিশ থিকসানা ৩৮, ওসাদা ফার্নান্ডো ৩৫; শাহিন শাহ আফ্রিদি ৪/৫৮)
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ৯০.৫ ওভারে ২১৮/১০ (বাবর আজম ১১৯, মোহাম্মদ রিজওয়ান ১৯; প্রভাত জয়সুরিয়া ৫/৮২)
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: ১০০ ওভারে ৩৩৭/১০ (দিনেশ চান্দিমাল ৯৪*, কুশল মেন্ডিস ৭৬, ওসাদা ফার্নান্ডো ৬৪; মোহাম্মদ নওয়াজ ৫/৮৮, ইয়াসির শাহ ৩/১২২)
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: ১২৭.২ ওভারে ৩৪২/৬ (আবদুল্লাহ শফিক ১৫৮*, বাবর আজম ৫৫, মোহাম্মদ রিজওয়ান ৪০; প্রভাত জয়সুরিয়া ৪/১৩৩)
ফল: পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে পাকিস্তান।