‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রীড়াযজ্ঞ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের অপেক্ষা ফুরিয়ে মরুর বুকে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। স্বাভাবিকভাবেই আয়োজনের দিক থেকে কোনো কমতি রাখেনি আয়োজক দেশ কাতার। এর মধ্যেই শেষ হয়েছে যাবতীয় প্রস্তুতি। প্রস্তুত নান্দনিক সব ভেন্যুও। কাতারের পাঁচটি শহরের আটটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপ।
আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর উদাহরণ হয়ে ওঠা স্টেডিয়ামগুলো যেনো মরুর বুকে ফুটন্ত একেকটি পদ্ম। শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, স্টেডিয়ামগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। দেশটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কথা বিবেচনা করে স্টেডিয়ামগুলোকে করা হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং পরিবেশবান্ধব।
কোথায় খেলবেন মেসি-রোনালদো-নেইমাররা— এ নিয়ে সমর্থকদের আগ্রহের কমতি নেই। চলুন এক নজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কাতারের সেই সব নান্দনিক স্টেডিয়ামগুলোতে। ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পর্বে থাকছে আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়াম ।
আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়াম
কাতারের সবচেয়ে বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব আল-রাইয়ান এসসির হোম ভেন্যু আহমদ বিন আলী স্টেডিয়াম। মধ্য দোহা থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে কাতারের অন্যতম ঐতিহাসিক শহর উম আল আফায়েইতে অবস্থিত এ স্টেডিয়াম। মরুভূমির প্রান্তে অবস্থিত এ শহর নিয়ে অনেক রূপকথার গল্প প্রচলিত রয়েছে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে। এ সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতীকগুলোকে প্রতিফলিত করে তৈরি করা হয়েছে এ স্টেডিয়াম। এর নকশার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো উত্কলিত সম্মুখভাগ। স্টেডিয়ামের বাইরে মরুভূমির কাছাকাছি পর্যটনঅঞ্চল এবং পণ্যের স্টলগুলোকে বালির টিলার মতো আকৃতি দেওয়া হবে।
সম্মুখভাগের জটিল জ্যামিতিক নিদর্শনগুলো মরুভূমির সৌন্দর্য, স্থানীয় উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের পাশাপাশি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে প্রতিফলিত করে। রাতের বেলায় আলো ঝলমলে স্টেডিয়ামটির সৌন্দর্য আরও বাড়ে। স্টেডিয়ামটি অবশ্য 'আল-রাইয়ান স্টেডিয়াম' নামেই বেশি পরিচিত। এই স্টেডিয়াম ২০০৩ সালে যখন তৈরি করা হয় তখন এর ধারণক্ষমতা ছিল ২১ হাজারের মতো। এর কিছু অংশ ভেঙে নতুন করে সংস্কার করার পর এই মাঠের ধারণক্ষমতা বর্তমানে ৫০ হাজার। এতে খরচ হয়েছে ৩৬০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তবে সংস্কারের সময় বিদ্যমান গাছগুলোকে যত্ন সহকারে ধরে রাখা হয়েছে। একটি পরিবেশ বান্ধব নতুন দোহা মেট্রো সিস্টেমের মাধ্যমে এখানে ভ্রমণ করতে পারবেন সমর্থকরা। ম্যাচ চলাকালীন সর্বোত্তম আরাম নিশ্চিত করতে সমর্থকদের একটি লাইটওয়েট ক্যানোপি এবং উন্নত কুলিং সিস্টেমের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হবে। 'মরুভূমির প্রবেশদ্বার' লিখিত লেবেলযুক্ত স্টেডিয়ামটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আমির কাপ ফাইনালের সময় উদ্বোধন করা হয়। অত্যাধুনিক এ স্টেডিয়ামটিতে বিশ্বকাপের ৬টি গ্রুপ ম্যাচ এবং শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।