টুর্নামেন্টজুড়ে উড়ন্ত ছন্দে থাকা শ্রীলঙ্কার টপঅর্ডার শিরোপার মঞ্চে এসে খেই হারাল। হারিস রউফ ও নাসিম শাহের তোপে এক পর্যায়ে ৫১ রানেই ৫ উইকেট নেই শানাকাদের। নাটকের শুরুটাও সেখানেই। পরের গল্প লঙ্কানদের পাওয়ার হিটিংয়ের। ভানিডু হাসারাঙ্গা ও ভানুকা রাজাপাকসের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহই পেয়েছে ক্রিস সিলভারউডের শিষ্যরা।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) টসে জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান। বাবর আজমের দলকে ১৭১ রানের লক্ষ্য দিয়েছে লঙ্কানরা। জবাবে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে মাত্র ১৪৭ রানেই সব উইকেট হারায় পাকিস্তান। ফলে ২৩ রানে জয়ী হয় শ্রীলংকা।
দলে বড় তারকার ছড়াছড়ি নেই। টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও যাচ্ছেতাই। এশিয়া কাপ শুরুর আগেও এই শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে বাজি ধরতে সাহস করতেন না কেউ। শ্রীলঙ্কার শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ছিল বলতে গেলে শূন্যের কোটায়।
প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ধরাশায়ী হওয়ার পর লঙ্কানদের সম্ভাবনা আরও উবে যায়। কিন্তু পুরো বিশ্ব না ভাবলেও দাসুন শানাকার দল বোধ হয় ভেবেছিল। আত্মবিশ্বাস ছিল, তাদের পক্ষে সম্ভব।
নাহলে এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়! ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান-যে দলই সামনে পড়েছে-স্রেফ উড়ে গেছে লঙ্কানদের সাহসিকতার সামনে। পাকিস্তানকে তো সুপার ফোর পর্বের শেষ ম্যাচেও হারিয়েছিল।
এবার ফাইনালে আরও একবার পাকিস্তানবধের গল্প লিখলো লঙ্কানরা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ‘আন্ডাররেটেড’ দল হয়েও জিতে নিলো এশিয়া কাপের শিরোপা।
রান তাড়ায় নেমে শেষ ৪ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৬১। বাবর আজমের দল কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছে তখনই। তবে সেট ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান ছিলেন, এরপর আসিফ আলি, ছিলেন খুশদিল শাহও।
তাই অতিমানবীয় কিছুর আশায় ছিলেন পাকিস্তানি সমর্থরা। তাদের সেই আশায় জল ঢেলে দিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তিন ব্যাটারকেই এক ওভারে তুলে নিলেন লঙ্কান এই লেগস্পিনার। পাকিস্তানেরও তৃতীয় এশিয়া কাপ জয়ের স্বপ্ন ভাঙলো তাতে।
এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরে শিরোপা জিতলো লঙ্কানরা। তাদের চেয়ে বেশি এশিয়া কাপ জিতেছে কেবল ভারত (৭ বার)।
১৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বড় হোঁচট খায় পাকিস্তান। টানা দুই বলে তারা হারিয়ে বসে অধিনায়ক বাবর আজম (৫) আর ফাখর জামানকে (০)।
২২ রানে নেই ২ উইকেট। এমন কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে উদ্ধার করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান আর ইফতিখার আহমেদ। তৃতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৭১ রানের জুটি গড়েন তারা।
রানের চাপ বাড়ছিল। তাই ইফতিখার শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নেন। টানা দুই বলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ছক্কা আর বাউন্ডারিও হাঁকান। তবে এক ওভার পরই আরেকটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন ইফতিখার। ৩১ বলে ৩২ করে ফেরেন মধুশানের শিকার হয়ে। ওই ওভারে আসে মোট ৬ রান।
পরের ওভারে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা দেন মাত্র ৪। ফলে শেষ ৫ ওভারে পাকিস্তানের দরকার পড়ে ৭০ রান। সেই চাপে ছক্কা হাঁকাতে যান মোহাম্মদ নওয়াজ (৬)। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে হন ক্যাচ।
ছক্কা মেরে ফিফটি পূরণ করেন রিজওয়ান। কিন্তু এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। আরেকটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে হাসারাঙ্গার বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দেন গুনাথিলাকাকে। ৪৯ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় রিজওয়ানের ব্যাট থেকে আসে ৫৬ রান।
২২ বলে তখন পাকিস্তানের দরকার ৬০ রান। ছক্কা-চার ছাড়া ম্যাচ জেতার উপায় নেই। যে আসিফ আলির ছক্কায় ভরসা করে ছিলেন পাকিস্তানি সমর্থকরা, সেই আসিফ গোল্ডেন ডাকে ফেরেন হাসারাঙ্গার বলে বোল্ড হয়ে। পাকিস্তানেরও সব শেষ হয়ে যায় ওই আউটের পরই।
শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল প্রমথ মধুশান, ৪ ওভারে ৩৪ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। লেগস্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৪ ওভারে ২৭ রানে নেন ৩টি উইকেট।
এর আগে ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কঠিন বিপদে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে ভানুকা রাজাপাকসে আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার জুটিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা।
এই জুটিই দলকে গড়ে দেয় চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহের ভিত। হাসারাঙ্গা ৩৬ করে ফিরলেও রাজাপাকসে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। দুই জীবন পেয়ে শেষ পর্যন্ত খেলে গেছেন তিনি। রাজাপাকসের ৪৫ বলে ৭১ রানের ইনিংসে ভর করেই ৬ উইকেটে ১৭০ রানের পুঁজি পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল হারিস রউফ। ৪ ওভারে ২৯ রানে নিয়েছেন ৩টি উইকেট।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের শিরোপা লড়াইয়ে টস জেতেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। প্রথমে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানান তিনি।