এ যেন ১৯৯২ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। সেবারের মতো চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অনেক যদি-কিন্তুর সমীকরণে পাকিস্তান সেমিফাইনালে উঠে। সেবারের মতো সেমিফাইনালে সামনে পায় উড়তে থাকা নিউজিল্যান্ডকে। কিন্তু হট ফেভারিট নিউজিল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে ফাইনালে উঠে যায় পাকিস্তান। ৩০ বছর পর সেই একই কাহিনির পুনরাবৃত্তি হলো। প্রথম ম্যাচ থেকেই উড়তে থাকা নিউজিল্যান্ডকে মাটিতে নামিয়ে ৭ উইকেটের বড় জয় নিয়ে ফাইনালে নাম লেখাল পাকিস্তান।
নিউজিল্যান্ডের দেয়া ১৫৩ রানের চ্যালেঞ্জকে মামুলি বানানোর কাজটি শুরু করেন টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের সফল দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম। টুর্নামেন্টজুড়ে রিজওয়ান রানের দেখা পেলেও নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন বাবর আজম। কিন্তু প্রয়োজনীয় সময়ে ঠিকই জ্বলে উঠলেন বাবর আজম। তুলে নেন এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ফিফটি। ৪১ বলে ফিফটি করার পর বাবর আজম টেন্ট বোল্টকে লং অন দিয়ে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে আউট না হলে পাকিস্তান জিততে পারতো ১০ উইকেটেই। বাবর যখন আউট হন তখন পাকিস্তানের রান ১২.৪ ওভারে ১০৫।
বাবর আউট হওয়ার পরের ওভারেই ফিফটির দেখা পান মোহাম্মদ রিজওয়ানও। মাত্র ৩৬ বলে তিনি তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২২তম ফিফটি। জয় থেকে ২১ রান দূরে থাকতে রিজওয়ান বোল্টের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার পর জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান মোহাম্মদ হারিসও (২৬ বলে ৩০ রান)। পরের সময়টা শান মাসুদ ও ইফতেখার আহমেদ নিরাপদে পার করে পাকিস্তানে ফাইনালে নিয়ে যান।
এর আগে সিডনিতে আজকের এই সেমিফাইনালে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া নিউজিল্যান্ড প্রথম ওভারেই পড়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের তোপের মুখে। বাঁহাতি পেসারদের বিপক্ষে ফিন অ্যালেনের দুর্বলতার বিষয়টা হয়তো বাবর আজমের জানাই ছিল। সে কারণেই হয়তো, প্রথম ওভারে দেখা মিলল শাহিন আফ্রিদির।
প্রথম বলে চার মারলেও দ্বিতীয় বলেই অ্যালেনের দুর্বলতা প্রকাশ পেল। এলবিডব্লিউর আবেদন উঠেছিল, আম্পায়ার মারাই ইরাসমাস আঙুলও তুলে দিয়েছিলেন। তবে রিভিউতে দেখা যায়, বলটা প্যাডে লেগেছিল ব্যাটের কোণা ছুঁয়ে। সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও পরের বলেই এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফেরেন তিনি।
শুরুর ধাক্কাটা উইলিয়ামসন আর ডেভন কনওয়ে মিলে সামাল দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। সে চেষ্টার ইতি ঘটল পাওয়ারপ্লের শেষ বলে। হারিস রউফের বলটা মিড অফে ঠেলে একটা রান নিতে চেয়েছিলেন, তবে শাদাব খানের দারুণ এক থ্রোতে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয় তার, মাসুল গুণতে হয় উইকেটটা খুইয়ে।
ওভার দুয়েক পর গ্লেন ফিলিপসও যখন ফিরলেন মোহাম্মদ নওয়াজের শিকার হয়ে, তখন মনে হচ্ছিল তাসের ঘরের মতোই বুঝি ভেঙে পড়ছে কিউই লাইনআপ। তবে তা হয়নি উইলিয়ামসন আর ড্যারিল মিচেলের কল্যাণে।
উইলিয়ামসন ফিফটির আগে আউট হন, তবে ফেরার আগে মিচেলের শেষের ঝড়ের মঞ্চটা গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিচেল পেলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় আর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মঞ্চে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। তাতে ভর করেই শেষতক নিউজিল্যান্ড পায় ১৫২ রানের পুঁজি। ফাইনালে যেতে হলে এখন পাকিস্তানের চাই ১৫৩ রান।