উইন্ডসর পার্কে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচের পর পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর। এখানে সবশেষ টি-টোয়েন্টি হয়েছে আট বছর আগে। দলে এক গাদা পরিবর্তন এনেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সব মিলিয়ে একটা নতুন শুরুর আবহ। তবে বাংলাদেশ পড়ে আছে আগের চক্রেই, বরাবরের মতো খুঁজে ফিরবে পুরনো সমস্যার সমাধান।
ডমিনিকার উইন্ডসর পার্কে প্রথম টি-টোয়েন্টি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায়।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আসলে কীভাবে খেলা উচিত, সেটাই যেন এখনও ঠিক করতে পারছে না বাংলাদেশ। তাই এতো দিন পরেও নিজস্ব কোনো ধরন গড়ে তুলতে পারনি তারা। অনেক প্রস্তুতি নিয়েও গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কাটে খুব বাজে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের আগে তাই এই সিরিজ যেন বাংলাদেশের জন্য আত্ম অনুসন্ধানের।
জস বাটলার কিংবা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো পাওয়ার হিটার নেই বাংলাদেশের। রান তোলার জন্য তাদের ভরসা তাই ‘স্কিল হিটিং।’ বিচ্ছিন্ন দুয়েকটা সাফল্য এলেও বড় দাগে এই পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার তেমন কোনো আভাস এখনও মেলেনি।
বাংলাদেশের সমস্যার শুরু উদ্বোধনী জুটি দিয়ে। নাঈম শেখের কথা ভুলে আপাতত মুনিম শাহরিয়ারকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে দল। এই তরুণ বিপিএলের সবশেষ আসরে দেখিয়েছেন, উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার সামর্থ্য আছে তার। এরই একটি পরীক্ষা হয়ে যাবে এবার।
পাওয়ার প্লে কখনোই কাজে লাগাতে পারে না বাংলাদেশ, কমাতে পারছে না ডট বলের সংখ্যাও। বড় সংগ্রহও গড়তে পারে না খুব একটা। তাই মাহমুদউল্লাহদের বড় দুর্ভাবনা ব্যাটিং নিয়েই। চোটের জন্য এবার নেই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলি, হজের জন্য পুরো সফর থেকেই ছুটি নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম।
মিডল অর্ডারে তাই কিছুটা হলেও ঘাটতি আছে। দুই পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও শহিদুল ইসলামের খেলা হচ্ছে না ভিন্ন ভিন্ন কারণে। তাই ব্যাটিং অর্ডারে গভীরতা কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকছেই।
শেষ মুহূর্তে তাসকিন আহমেদ ও মেহদী হাসান মিরাজকে যুক্ত করায় বোলিংয়ে শক্তি বেড়েছে বাংলাদেশের। অনেক দিন ধরেই বোলিং ইউনিট প্রায় একই আছে। সময়ের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আছেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান। পেস বোলিংয়ে দুই বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলামের সঙ্গে তাসকিন।
এই বোলিং আক্রমণের সামর্থ্য আছে যে কোনো দলের পরীক্ষা নেওয়ার। তবে তাদের লড়াই করার মতো একটা পুঁজি এনে দেওয়ার দায়িত্ব ব্যাটসম্যানদের। একে উন্ডসর পার্কে অনেক দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় না, তারওপর সফরকারীরা কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার খুব একটা সুযোগ পাননি।
তাই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় এক পরীক্ষাই হতে যাচ্ছে ডমিনিকার দুই টি-টোয়েন্টি।
টেস্ট সিরিজের পর হাতে যথেষ্ট সময় ছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সেন্ট লুসিয়া ছেড়ে যথা সময়ে ডমিনিকায় যাওয়া সম্ভব হয়নি। সমুদ্রে পাঁচ ঘণ্টার ফেরি পথের যাত্রায় খেলোয়াড়দের অনেকে ‘সি সিকনেসে’ ভোগায় প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়তে পারে।
সবশেষ ভারত সফরের স্কোয়াড থেকে এক গাদা পরিবর্তন এনে এই সিরিজের দল সাজিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এতো পরিবর্তনের ছড়াছড়ির মধ্যে অভিজ্ঞতার ঘাটতি স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক হাজারের বেশি রান আছে কেবল অধিনায়ক নিকোলাস পুরানের।
২০১৮ সালে সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই শনিবার মাঠে নামবে সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা।