টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ থেকেই নতুনের কেতন ওড়াতে চায় বাংলাদেশ। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আর নবনিযুক্ত টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার শ্রীধরন শ্রীরামও চাচ্ছেন আরব আমিরাতের দুবাই-শারজায় নতুন কিছু করে দেখাতে। চাইলেই তো আর হবে না। কাজটি কঠিন। চ্যালেঞ্জিং।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে ভালো করতে হলে পাড়ি দিতে হবে কঠিন পথ। এই কঠিন পথে টাইগারদের সবচেয়ে সমস্যাসঙ্কুল জায়গার নাম ‘ওপেনিং।’ টিম বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বল ও কমজোরি জায়গাই হলো টপ অর্ডার ব্যাটিং। বিশেষ করে উদ্বোধনী জুটি একদমই নড়বড়ে।
ইনিংস শুরুর পর পরই হুড়মুড় করে ভেঙ্গে যাচ্ছে। একটা শক্ত ভিত গড়ে ওঠে না অনেককাল। সবচেয়ে বড় কথা হলো ওপেনারদের ফর্মহীনতা খুব ভুগিয়েছে, ভোগাচ্ছে এবং সেটা শুরু হয়েছে সেই গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে থেকেই। এখন সব ফরম্যাটে যিনি ফর্মের চুড়ায়, যার ব্যাট নিয়মিত হাসছে- সেই লিটন দাসও গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলেন চরম ফ্লপ।
রান করতে যেন ভুলেই গিয়েছিলেন দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার। তার সঙ্গীদের অবস্থা ছিল আরও খারাপ। পাওয়ার প্লে’র ফিল্ডিং বিধিবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে ফিল্ডারদের মাথার ওপর দিয়ে প্রথম ৬ ওভারে রান চাকা সচল করা বহুদুরে, ওপেনাররা উইকেটে থিতু হতেই বারবার ব্যর্থ হয়েছেন।
কেউ দাঁড়াতে পারছিলেন না। যে কারণে ওপেনিং সংকট আরও প্রবল হয়েছে। পরের দিকে লিটন দাস টেস্টে রান করে ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পেলেও বাকিদের অবস্থা এখনো আগের মতই নড়বড়ে। জীর্ণ-শীর্ণ। আর তাই বারবার ওপেনিং জুটি বদলাচ্ছে। একে বাদ দিয়ে ওকে নেয়া হচ্ছে।
গতবছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। একের পর এক ওপেনার বদল হচ্ছে। নাইম শেখ, লিটন দাস, সাইফ হাসান, এনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুনিম শাহরিয়ার আর পারভেজন ইমন-কতজনকে দিয়েই পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালানো হচ্ছে; কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না।
মাঝে লিটন ফর্মে ফিরলেও বাকিরা কেউই নিজেদের খুঁজে পাননি। এদিকে জিম্বাবুয়ে সফর থেকে লিটনও আহত হয়ে মাঠের বাইরে। এবারের এশিয়া কাপেও দলে নেই লিটন।
তার অনুপস্থিতিতে ওপেনিংটা আরও দুর্বল ও কমজোরি হয়ে পড়েছে। প্রথমে ১৭ জনের দলে ওপেনার হিসেবে নেয়া হয়েছিল এনামুল হক বিজয় আর পারভেজ হোসেন ইমনকে। আর শেষ মুহূর্তে দলে ডাকা হয়েছে নাইম শেখকেও। নাইম শেখ গতবছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও খেলেছেন; কিন্তু কিছুই করতে পারেননি। বেশি সময় উইকেটে থেকে স্লথ ব্যাটিংয়ের কারণে উল্টো সমালোচিত হয়েছেন।
এদিকে এবার এশিয়া কাপে দলের এক নম্বর ওপেনার ভাবা হচ্ছে এনামুল হক বিজয়কে। তিন বছর পর দলে ফিরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নজর কাড়লেও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিজয় কিছুই করতে পারেননি। তিন ম্যাচে (২৬, ১৬, ১৪) তার সাকুল্যে সংগ্রহ ছিল ৫৬ রান।
একই অবস্থা আরেক ওপেনার পারভেজ ইমনেরও। তিনিও এক ম্যাচে সুযোগ পেয়ে রান করেছেন মাত্র ২। অর্থাৎ তিন ওপেনারের কেউই প্রতিষ্ঠিত নন। আসা-যাওয়ার ভেতরেই আছেন। আর কারো ফর্মও ভাল না। এরকম তিন ওপেনার নিয়ে ফজল হক ফারুকি, নাভিন-উল হক, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদ খান, মুজিবুর রহমান ও মোহাম্মদ নবির সাজানো আফগানিস্তানের ধারালো ও বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ের বিপক্ষে ভাল কিছু করা রীতিমত চ্যালেঞ্জিং।
মঙ্গলবারের ম্যাচে বাংলাদেশের সাফল্যের পূর্ব শর্তই হলো টাইগার ওপেনারদের সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা। বিজয়, নাইম আর পারভেজ ইমন (যদি খেলেন) কি সে কঠিন চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারবেন?