‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রীড়াযজ্ঞ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের অপেক্ষা ফুরিয়ে মরুর বুকে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। স্বাভাবিকভাবেই আয়োজনের দিক থেকে কোনো কমতি রাখেনি আয়োজক দেশ কাতার। এর মধ্যেই শেষ হয়েছে যাবতীয় প্রস্তুতি। প্রস্তুত নান্দনিক সব ভেন্যুও। কাতারের পাঁচটি শহরের আটটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপ।
আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর উদাহরণ হয়ে ওঠা স্টেডিয়ামগুলো যেনো মরুর বুকে ফুটন্ত একেকটি পদ্ম। শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, স্টেডিয়ামগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। দেশটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কথা বিবেচনা করে স্টেডিয়ামগুলোকে করা হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং পরিবেশবান্ধব।
কোথায় খেলবেন মেসি-রোনালদো-নেইমাররা— এ নিয়ে সমর্থকদের আগ্রহের কমতি নেই। চলুন এক নজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কাতারের সেই সব নান্দনিক স্টেডিয়ামগুলোতে। ধারাবাহিক প্রতিবেদনের চতুর্থ পর্বে থাকছে আল বায়াত স্টেডিয়াম ।
আল বায়াত স্টেডিয়াম
আল থুমামা স্টেডিয়াম যেমন মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী টুপির আদলে, তেমনি আল বায়াত স্টেডিয়াম দেখতে আরব বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী বেদুইন তাঁবুর মতো। বক্সী ডিজাইনের সাদা-কালো স্ট্রাইপের এ স্টেডিয়ামে সত্যিকারের তাঁবুর মতো একটি গাইড দড়িও রয়েছে। লুসাইল স্টেডিয়ামের পর এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম ভেন্যু। এই মাঠে বসে একসঙ্গে এক হাজার সংবাদকর্মী কাজ করতে পারবেন।
এই মাঠের পার্কিং এরিয়ায় ৬ হাজার গাড়ি, ৩৫০টি বাস এবং চলাচলরত আরো ৩৫০টি বাস কিংবা শ্যাটল পার্ক করা যাবে। এ ছাড়া মাঠটিতে চলাচলরত থাকতে পারবে হাজার খানেক ট্যাক্সি ও ওয়াটার ট্যাক্সি। এই স্টেডিয়ামটি পার্ল ডাইভিং এবং মাছ ধরার জন্য বিখ্যাত উত্তরের শহর আল খোরে অবস্থিত। স্টেডিয়ামের নকশা যেমন কাতারের অতীত এবং বর্তমানকে সম্মান করে, তেমনি শহরের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসকেও তুলে ধরে। মডুলার ডিজাইনের উপরের স্তরের আসনগুলো বহনযোগ্য এবং বিশ্বকাপ শেষে সরিয়ে ফেলে ক্রীড়া অবকাঠামোর প্রয়োজনে উন্নয়নশীল কোনো দেশকে দান করা হবে।
বিশ্বকাপ নভেম্বর মাসে হলেও এ সময়ে কাতারের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে, তাই তাপ থেকে বাঁচতে এই স্টেডিয়ামে একটি বহনযোগ্য ছাদও রয়েছে। স্টেডিয়ামটির নকশা তৈরি করেছে ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসি এবং অ্যাসপায়ার জোন ফাউন্ডেশন। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের শুরুতে কাতারের জাতীয় ক্রীড়া দিবসের সঙ্গে মিল রেখে স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করা হয়। এ স্টেডিয়ামের নির্মাণ ব্যায় প্রায় ৮৪৭ মিলিয়ন ডলার। অন্যসব স্টেডিয়ামের তুলনায় দোহা থেকে এ স্টেডিয়াম সবচেয়ে দূরে অবস্থিত হলেও এখানেই বেশি সময় থাকতে চাইবেন দর্শকরা। কারণ এরসঙ্গে রয়েছে কয়েকটি পাঁচ তারকা হোটেল ও শপিংমল যা ম্যাচ চলাকালীন সময়ে উন্মুক্ত থাকবে। হোটেল রুমের বারান্দায় বসে খেলা উপভোগও করা যাবে। ৬০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ এবং সেমিফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া একটি কোয়ার্টার ফাইনাল ও একটি দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচসহ মোট ৯টি ম্যাচও অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে।