দীর্ঘদিনের প্রস্তুতিতে অবকাঠামোর দিক দিয়ে দারুণ করেছে কাতার। বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতিতে তারা লেটার মার্কসের চেয়েও বেশি পাওয়ার দাবিদার। কিন্তু মাঠের ফুটবলে পারফরম্যান্সের প্রশ্ন আসলেই ভাবতে হচ্ছে অনেক কিছু। আয়োজক হিসেবে তারা প্রথমবার সুযোগ পেয়েছে বিশ্বকাপে খেলার। এটা কেবল সুযোগ পাওয়ার জন্য পাওয়া নয়, এবার ময়দানি লড়াই দেখানোর পালা। এ লড়াই যে মর্যাদার লড়াই, নিজেদের ফুটবলের উন্নতি বিশ্বকে দেখানোর লড়াই।
বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ইকুয়েডরের মুখোমুখি হবে কাতার।
অবশ্য এই ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল না। ২১ নভেম্বর সেনেগাল ও নেদারল্যান্ডসের ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়ার কথা ছিল বিশ্বকাপ। কিন্তু কাতার ফিফার কাছে আবেদন করে উদ্বোধনী ম্যাচটি যাতে তাদের খেলতে দেওয়া হয়। সেই আবেদনে সাড়া দেয় ফিফা। তাতে বিশ্বকাপ এগিয়ে আসে একদিন অর্থাৎ ২০ নভেম্বর। তাতে অবশ্য বিশ্বকাপের ঐতিহ্যও রক্ষা হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলে হয় আয়োজক দেশ, না হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। এ যাত্রায়ও সফল হয় কাতার। এবার তাদের মাঠে সফল হওয়ার পালা।
কাতার প্রথমবার বিশ্বকাপ খেললেও ইকুয়েডরের এটা চতুর্থ বিশ্বকাপ (২০০২, ২০০৬ ও ২০১৪)। তাও আট বছরের বিরতির পর। অবশ্য এর আগে একবারই তারা গ্রুপপর্বের গণ্ডি পেরুতে পেরেছিল। অর্থাৎ বিশ্বকাপে তাদের সেরা সাফল্য শেষ ষোলো। তাদের এবারের দলটি তরুণদের নিয়ে গড়া। তাদের রয়েছে গতি, ক্ষীপ্রতা আর দারুণ দম। বেশ কিছু উদীয়মান ও প্রতিভাবান তরুণ রয়েছেন এই দলে। তারা পাল্টে দিতে পারেন ম্যাচের গতিপথ। এই দিকটাই তাদের শক্তিমত্তার জায়গা। আর দুর্বলতার জায়গার নাম গোল করার দুর্বলতা। লা ট্রাইকালাররা সবশেষ পাঁচটি প্রীতি ম্যাচে খুব বেশি গোল হজম করেনি। আবার গোল দিতেও পারেনি খুব বেশি। তাদের এই ফিনিশিং দুর্বলতা কাতারের বিপক্ষে কাটিয়ে উঠতে পারে কিনা দেখার বিষয়।
অন্যদিকে কাতারকে আয়োজক কোটার দল হিসেবে ভাবলে ভুল করবেন। তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কিন্তু সমীহ করার মতো। তারা এশিয়ার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। তার মানে তারা উত্তর কোরিয়া, সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো হেভিওয়েট দলগুলোকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এছাড়া কনকাকাফ গোল্ড কাপে তারা সেমিফাইনাল খেলেছিল। তাদের আল মোয়েজ আলী গোল্ডকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন (৫ গোল)। সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন এশিয়ান কাপেও (৯ গোল)।
২০১৭ সাল থেকে কাতারের এই দলটি একসঙ্গে আছে। তাদের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফেলিক্স সানচেজ। এখন দেখার বিষয় ইকুয়েডরের বিপক্ষে আকরাম আফিফ-আলমোয়েজ আলীরা জ্বলে উঠতে পারেন কিনা মর্যদা রক্ষায়।
সবশেষ পাঁচটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতেছে কাতার। তারা গোল করেছে ৮টি। গোল হজম করেছে ২টি। সবশেষ ৯ নভেম্বর তারা ১-০ গোলে হারায় আলবেনিয়াকে। অন্যদিকে ইকুয়েডর তাদের সবশেষ পাঁচ ম্যাচে জিতেছে মাত্র ১টিতে, ১-০ গোলে হারিয়েছে কেপভার্দেকে। বাকি চারটি ম্যাচ হয়েছে ড্র, গোলশূন্য ড্র।
মুখোমুখি লড়াইয়ে অবশ্য দুটি দল সমানে সমান। তিন ম্যাচ খেলে উভয় দলের জয় একটি করে। গোলও সমান ৬টি করে। ফিফা র্যাংকিংয়েও তারা কাছাকাছি— কাতার ৫০, ইকুয়েডর ৪৪।
তবে ঘরের মাঠে খেলা হওয়ায় কিছুটা এগিয়ে থাকবে কাতার। উদ্বোধনী ম্যাচের ভেন্যু আল বায়াত স্টেডিয়ামে এর আগে তিন ম্যাচ খেলে তিনতেই জিতেছে তারা। গোল ব্যবধান ৯-০। চেনা পরিবেশ, চেনা মাঠ, চেনা দর্শকদের সামনে অল্প চেনা ইকুয়েডরকে কাতার কুপোকাত করতে পারে কিনা দেখার বিষয়।