বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ঢাকা, সিলেট ঘুরে চট্টগ্রামে এসেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি ঢাকা ক্যাপিটালের। আগের দুই ভেন্যুতে তাদের হারের যে ধারাবাহিকতা ছিল, তা এবার চট্টগ্রামেও দেখা গেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র সিলেটে শেষ ম্যাচে একটি মাত্র জয় ছিল তাদের অর্জন। কিন্তু চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচেই আবার সেই হারের বৃত্তের বন্দি হলো ঢাকা। বরিশালের কাছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারলো দলটি। আর এ জয়ে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে উঠে এলো বরিশাল।
সিলেট পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ১৪৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছিল ঢাকা ক্যাপিটাল। কিন্তু চট্টগ্রামে এসে তার ছিটে-ফোঁটাও ‘কারিশমা’ দেখাতে পারেনি ঢাকার ব্যাটসম্যানরা। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে তানজিদ ও লিটন দাস প্রথম চার ওভারে রান তুললেও এরপর থেকেই শুরু হয় বিপর্যয়। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস (১৩) দলীয় ৩১ রানে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান রিপন মণ্ডলের বলে। এরপর দলের খাতায় এক রান যোগ হতেই ফিরে যান মুনিম শাহরিয়ার (০)। দুজনকেই শিকার বানান ফাহমিন আশরাফ। তৃতীয় উইকেটে তানজিদের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন কোৎজে। কিন্তু বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে তিনিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি উইকেটে। মাহমুদউল্লাহর বলে ৮ রান করে বিদায় নেন নামিবিয়ার এ ক্রিকেটার।
এরপর ঢাকার তিন ব্যাটসম্যানকে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম। তাদের দলীয় সংগ্রহ ৪৮ থেকে ৭৮ হতেই সাব্বির আহমেদ ও থিসারা পেরেরার মতো দুই হার্ড হিটার ব্যাটারের উইকেট তুলে নেন তিনি। থিসারা রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিলেও সাব্বিরের ব্যাট থেকে আসে ১০ রান।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকলেও এক প্রান্ত আগলে রাখেন তানজিদ তামিম। এর মধ্যে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে তিনি নিজের হাফ সেঞ্চুরি আদায় করে নেন। কিন্তু মোসাদ্দেকও উইকেটে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। মাত্র ১১ রানের ইনিংস খেলে স্পিনার তানভিরের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি।
তবে মোসাদ্দেক আউট হলে ফারমানউল্লাহকে নিয়ে ব্যাট চালিয়ে খেলতে থাকেন তানজিদ তামিম। ১৭তম ওভার করতে আসা ফাহিম আশরাফের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই তিনি আউট হন। ঢাকার সংগ্রহ তখন ৭ উইকেটে ১২০ রান। তানিজদের ব্যাট থেকে আসে ৬২ রান। ৪২ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৪ ছয় এবং ২ চারের মার।
ইনিংসের বাকি ১৯ বলের মধ্যে ফারমানউল্লাহর ১৬ বলে ২ ছক্কা এবং ১ চারে ২২ রান যোগ করেন দলের খাতায়। এছাড়া অপর তিন ব্যাটসম্যান চতুরাঙ্গা, আবু জায়েদ এবং মোস্তাফিজুর রহমান মিলে যোগ করেন ৩ রান।
১৪০ রানের জবাবে ‘ঘরের মাঠে’ দেখেশুনে শুরু করেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। যদিও দ্বিতীয় ওভারেই বরিশাল হারিয়ে ফেলে বিপিএলে রানের জন্য সংগ্রাম করতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তকে। ২ রান করে আবু জায়েদের শিকারে পরিণত হন তিনি। এরপর ডেভিড মালানকে নিয়ে দেখেশুনে খেলতে থাকেন দলনেতা তামিম। দল যখন জয়ের সুবাস পাচ্ছিল, ঠিক তখনই থিসারা পেরেরার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তামিম। আউট হওয়ার আগে ৪৮ বলে ৬১ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি, বিপিএলের চলতি আসরে এটি তার চার নম্বর ফিফটি। তার এ ইনিংসে একটি ছয় এবং ছয়টি চারের মার ছিল। এছাড়া ডেভিড মালানের সঙ্গে তার জুটি ছিল ১১৭ রানের।
তৃতীয় উইকেটে মালানের সঙ্গে জাহানদাদ খান যখন জুটি বাঁধতে আসেন তখন জয় পেতে বরিশালের দরকার মাত্র ১৫ রান, হাতে ৩০ বল। কিন্তু সে হিসেবে বেশি সময় নেননি জাহানদাদ। চার বল খেলে দুই ছয়ের মারে তিনি নিজেই তুলে নেন ১৩ রান। ১৬ তম ওভারে বল করতে আসা মোসাদ্দেকের শেষ বলে ছয় মেরে তিনি জয় নিশ্চিত করেন। তবে মালানের ভাগ্য খারাপই বলতে হবে, মাত্র এক রাতের জন্য হাফ সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়েছে তার।
ঢাকার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান দিয়েছেন মোসাদ্দেক, ৪ ওভারে ৪৩। এছাড়া বরিশালের উইকেট দুটি নিয়েছেন যথাক্রমে পেরেরা ও আবু জায়েদ।
এদিকে এ জয়ে ফরচুন বরিশাল তিন জয়ে তালিকার দ্বিতীয়তে উঠে এলো। তবে তাদের নিচে থাকা চট্টগ্রাম কিংস যদি রাতের ম্যাচে জয় পায়, তাহলে বরিশালের স্থান হবে তৃতীয়তে। আর ঢাকা ক্যাপিটাল ফের হারের বৃত্তে বন্দি হলো। এ পর্যন্ত আট ম্যাচ খেলে ২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার একেবারে তলানিতে তারা। বিপিএলের সিলেট-পর্বে শুধুমাত্র একটি জয় জুটেছে তাদের ভাগ্যে।
ডিজে/ডিএস