চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দাপুটে জয়ের পাশাপাশি শ্বাসরুদ্ধকর জয় সবকিছুর সাথে দেখা হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র লালের। কিন্তু প্রথম ছয় ম্যাচের ছয়টিতে জয় পেয়ে লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটছিল মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু ঈদ পরবর্তী সপ্তম রাউন্ডে এসে ‘শনির দশা’ লাগে তাদের শিবিরে। ব্রাদার্সের সাথে মাঠের লড়াইয়ে প্রথমবারের মতো পরিচয় হয় হারের। কিন্তু অষ্টম রাউন্ডে এসেও তাদের শনির দশা কাটেনি। এদিন তারা ১৭ রানে হেরে যায় নবীন আগ্রাবাদ নওজোয়ান ক্লাবের কাছে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নামা আগ্রাবাদ নওজোয়ানকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন নাজিম উদ্দিন সাব্বির ও আবুল হাশেম রাজা। ১৩.১ ওভারে ৭৫ রানের জুটি গড়েন এ দু’জন। তবে, উদ্বোধনী জুটিতে রাজাকে দর্শক বানিয়ে ব্যাটিংয়ে রাজত্ব করেন সাব্বির। আউট হওয়ার আগে সাব্বির ৫২ বলে দুই হালি চার আর তিন ছয়ে ৬৩ রান করেন। এদিন রাজা ছিলেন টেস্ট মেজাজে। অবশ্য ২ রানের ব্যবধানে আরও ২টি উইকেট হারিয়ে বসে নওজোয়ান। এরমধ্যে ছিলেন ৩৩ বলে ৯ রান করা রাজাও।
৭৭ রানে ৩ উইকেট হারানো নওজোয়ানকে চালকের আসনে বসে রানের রাস্তায় রাখেন দলের উইকেট রক্ষক মিনহাজ সৌরভ। দলীয় ১১৪ রানের সময় তাকে একা রেখে ফিরে যান কোটার খেলোয়াড় মিজানুর রহমানও। এরপর মিনহাজের সাথে এসে যোগ দেন আরেক মিনহাজ; মিনহাজ সাকিব। এ দু’জন মিলে মুক্তিযোদ্ধার বোলারদের আর কোন সফলতার হাসি হাসতে না দিয়ে দলের রান নিয়ে যান ২০৫-এ। মোহাইমিনের প্রথম শিকারে পরিণত হওয়া মিনহাজ সাকিবের ইনিংস থেমে যায় ৪৩ রান। ৫৪ বলে গড়া ইনিংসটিতে ৪টি চারের পাশাপাশি ছিল ১টি ছয়ের মারও।
সাকিবের বিদায়ের পর শরীফুল ইসলাম ২২ রান করে বিদায় নেয়ার পাশাপাশি দ্রুত বিদায় নেন মাজহারও। কিন্তু একপ্রান্তে অবিচল থেকে ইনিংসের শেষ ওভারে গিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান মিনহাজ সৌরভ। তার ১০৮ বলে ৮ চার আর ২ ছয়ে গড়া ১০০ রানের ইনিংসের বদৌলতে আগ্রাবাদ নওজোয়ান পেয়ে যায় ২৬৬ রানের বড় সংগ্রহ।
এর আগে, এবারের আসরে কোন দল আড়াইশো রান চেজ করে জিততে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধাকে জিততে হলে করতে হতো আসরের রেকর্ড। কিন্তু তারা প্রথম ওভারেই হারিয়ে ফেলে বড় ইনিংস খেলে অভ্যস্ত আল আমিন হোসাইনকে। দলীয় ৪৭ রানের মাথায় ১৬ বলে ২৩ রান করে বিদায় নেন আরেক ওপেনার সাফায়েত ইফতিও।
এরপর জাতীয় তারকার সাদমান ইসলাম আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার মোহাইমিনুল খান মিলে চেষ্টা করেন দলের হাল ধরতে। এ দু’জন ৪৪ রানের জুটি গড়লেও তা আস্কিং রান রেটের তুলনায় ছিল বেশ শ্লথ। ৬২ বলে ২ চারে ৪১ রান করা সাদমানকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পেলেন শরীফুল। দলীয় ১৫২ রানের মাথায় দলীয় অধিনায়ক সাজ্জাদুল হক রিপন বিদায় নিলে বড় ধাক্কা খায় মুক্তিযোদ্ধা। তাদের ধাক্কা আরও পাক্কা হয় ৫৪ রান করা মোহাইমিনুল বিদায় নিলে।
২৬৭ রান তাড়া করতে নেমে ১৭৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলা মুক্তিযোদ্ধার তখনো আশার প্রদীপ হয়ে উইকেটে জ্বলছিলেন শেষ ভরসা রতন দাশ। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মুরসালিন মুরাদ। মুরাদ ২৬ বলে ৫ চারে ৩২ রান করে ৪৭.৫ ওভারে বিদায় নেন। তখনো জয় থেকে ৩০ রান দূরে মুক্তিযোদ্ধা। ৪৯তম ওভারে রতস ১টি করে চার আর ছয়ে শেষ ওভারে লক্ষ নিয়ে আসেন ১৯ রানে।
শেষে ওভারের প্রথম বলটি ডট দেয়ার পর দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়ে যান রতন। আগ্রাবাদ নওজোয়ান টানা দ্বিতীয় জয় এবং আসরে দ্বিতীয় শিরোপা প্রত্যাশী দল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে। এর আগে তাদের হাতে ‘ধরা’ খেয়েছিল আরেক শিরোপা প্রত্যাশী পাইরেটস।
নওজোয়ানের পক্ষে বল হাতে দলকে সফলতা এনে দেন মাজহার (৩ উইকেট), ইরফাত (২ উইকেট) এবং সাব্বির (২ উইকেট)।