আনন্দ, উত্তেজনা, রোমাঞ্চ ছিল। তবে সঙ্গী ছিল উৎকণ্ঠাও। ক্রিকেট এত সংক্ষিপ্ত কী করে হবে! অনেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না। নাক ছিটকে কেউ কেউ বলছিলেন ‘এটা কী ক্রিকেট নাকি!’। এমন নানা ধরনের শঙ্কা নিয়ে শুরু হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের।
এক দশকের বেশি সময় পেরিয়ে এই ফরম্যাটই এখন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিনোদনের উৎস। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কল্যাণে আমূল বদলে গেছে ব্যাটে-বলের লড়াই। টি-টোয়েন্টির প্রভাবে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট, এমনটিও মনে করছেন অনেকে।
সবকিছুর গোড়াপত্তন হয়েছিল ২০০৭ সালে। সেবারই প্রথমবারের মতো বসেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। মূলত ওই টুর্নামেন্টের সাফল্যই পরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আকাশ ছোঁয়া সাফল্যের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ওই বছরই ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তখন সেটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর। সেটিকে ছুঁয়ে ফেলেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। ভরপুর বিনোদন আর বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে ছিল দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়াম।
বিশ্বকাপে ৫৭ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১৭ রান করে বিশ্বকে নতুন বিনোদনের খোঁজ দিয়েছিলেন ক্রিস গেইল। ওই ইনিংসে তিনি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ১০টি। রেহাই পাননি শন পোলক কিংবা মাখায়া এনটিনি কেউই।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বার্তা দিতে যেন যথেষ্ট হয়নি এটিও। স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় ছক্কা হাঁকিয়ে যুবরাজ সিং চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বকে। তিনি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ১২ বলে। কেবল যে ব্যাটসম্যানদেরই দাপট ছিল ব্যাপারটা এমনও না।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিক এই বিশ্বকাপেই পেয়েছিলেন ব্রেট লি। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি গড়েছিলেন এই কীর্তি। অনেক নতুনের টুর্নামেন্টের শেষটা হয়েছিল আরও রোমাঞ্চকর। ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি ফাইনালে, এর চেয়ে বেশি কীইবা চাইতে পারতেন সমর্থকরা?
শুরু থেকে শেষ অবধি পুরোটাতেই রোমাঞ্চ ছিল এই ম্যাচে। টাই হয়ে যায় ফাইনাল! শেষটাও নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা। স্টাম্প হিট যে দল বেশি করতে পারবেন, তারাই জিতবেন বিশ্বকাপ। সমীকরণটা দাঁড়িয়েছিল এমন।
সেখানে ধোনি নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন আরেকবার। তার ‘ধোনি’ হয়ে ওঠার শুরুও যেন সেখানেই। পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ উল হক স্টাম্প হিট করতে যেখানে বেছে নেন বোলারদের, ধোনি সেখানে খুঁজে নেন ‘ভালো ফিল্ডারদের।’ তার ওই বুদ্ধি কাজেও লাগে। বিশ্বকাপ জিতে উল্লাসে ভাসে ভারত।
বাংলাদেশ কেমন করেছিল :
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সবাইকে চমকে দেয় বাংলাদেশ। হারিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশকে ১৬৪ রানের লক্ষ্য দেয় ক্যারিবীয়ানরা। পরে মোহাম্মদ আশরাফুলের ২৭ বলে ৬১ রানের ঝড়ে ১২ বল আগেই ছয় উইকেটের জয় পায় টাইগাররা।
অবশ্য এরপর আর ওই বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৭ ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৯ উইকেটে হারে টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার কাছে ৬৪ ও পাকিস্তানের কাছে হারে ৪ উইকেটের ব্যবধানে।
স্বাগতিক : দক্ষিণ আফ্রিকা
চ্যাম্পিয়ন : ভারত
রানার আপ : পাকিস্তান
অংশগ্রহণকারী দল : ১২টি
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় : শহীদ আফ্রিদি