‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রীড়াযজ্ঞ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের অপেক্ষা ফুরিয়ে মরুর বুকে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। স্বাভাবিকভাবেই আয়োজনের দিক থেকে কোনো কমতি রাখেনি আয়োজক দেশ কাতার। এর মধ্যেই শেষ হয়েছে যাবতীয় প্রস্তুতি। প্রস্তুত নান্দনিক সব ভেন্যুও। কাতারের পাঁচটি শহরের আটটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপ।
আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর উদাহরণ হয়ে ওঠা স্টেডিয়ামগুলো যেনো মরুর বুকে ফুটন্ত একেকটি পদ্ম। শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, স্টেডিয়ামগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। দেশটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কথা বিবেচনা করে স্টেডিয়ামগুলোকে করা হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং পরিবেশবান্ধব।
কোথায় খেলবেন মেসি-রোনালদো-নেইমাররা— এ নিয়ে সমর্থকদের আগ্রহের কমতি নেই। চলুন এক নজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কাতারের সেই সব নান্দনিক স্টেডিয়ামগুলোতে। ধারাবাহিক প্রতিবেদনের সপ্তম পর্বে থাকছে আল-জানোব স্টেডিয়াম ।
আল-জানোব স্টেডিয়াম
দোহার দক্ষিণের প্রাচীনতম এলাকাগুলোর একটি আল ওয়াকরাহতে অবস্থিত এ স্টেডিয়াম। পূর্বে শহরের নামে আল ওয়াকরাহ স্টেডিয়াম পরিচিত ছিল আল জানোব স্টেডিয়াম। এর নকশা উপকূলীয় শহরের সামুদ্রিক ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলিয়ে কাতারের ঐতিহ্যবাহী ধো নৌকার বাতাসে ভরা পালের আকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে। মূলত ঐতিহ্যবাহী পার্ল ডাইভিং এবং মাছ ধরার বিষয়টিকেও বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে। এতে থাকা বহনযোগ্য ছাদ এবং একটি উদ্ভাবনী কুলিং সিস্টেম বছর জুড়েই মাঠটিকে শীতল রাখতে পারবে, এমনকি গ্রীষ্মের উত্তাপের সময়ও এখানে ঠাণ্ডার কমতি থাকবে না। প্রয়াত বৃটিশ-ইরাকি স্থপতি ডেম জাহা হাদিদ এ স্টেডিয়ামের ডিজাইন করেন। ২০১৬ সালে ৬৫ বছর বয়সে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। যখন তার এই ডিজাইন প্রথম প্রকাশিত হয় তা রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
অনেকের মতে স্টেডিয়ামটি মেয়েদের গোপনাঙ্গের মতো দেখায়। ডেম জাহা অবশ্য এই তুলনায় বেশ খেপে গিয়েছিলেন। এই স্টেডিয়ামটি আলোচনায় আসে এর বিশাল আয়তনের জন্যও। শুধু তাই নয়, ৪০ হাজার ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামটির পার্কিংয়ে একসঙ্গে ৫০ হাজার গাড়ি পার্ক করা যাবে। বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা আটটি স্টেডিয়ামের মধ্যে এই স্টেডিয়ামের কাজই সবার আগে শেষ হয়। ২০১৪ সালে নির্মাণ কাজ শুরুর পর ২০১৯ সালের মে মাসে আমির কাপ দিয়ে এই মাঠ উদ্বোধন করা হয়। এর জন্য মোট খরচের পরিমাণ ৬৫৬ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। লুসাইল স্টেডিয়ামের মতো বিশ্বকাপ শেষে এর ২০ হাজার আসন সরিয়ে ফেলা হবে। বিশ্বের উন্নয়নশীল কোনো দেশের ক্রীড়া প্রকল্পে দান করা হবে এর আসনগুলো। আতিথেয়তা এবং বিনোদনের সুবিধার্থে অবকাশ যাপনের সর্বাধুনিক সুবিধা সমন্বিত পার্ক দ্বারা বেষ্টিত স্টেডিয়ামটি যা আগামী দিনগুলোতে পুরো কাতারকে উপকার করবে। ভেন্যুটির চারপাশে অন্য সব খেলার ব্যবস্থায় রয়েছে। সেই সঙ্গে একটি স্কুল, ইভেন্ট হল, সাইকেল চালানো, ঘোড়ায় চড়া এবং রানিং ট্র্যাকও রয়েছে। সব মিলিয়ে স্টেডিয়ামটি সৃজনশীল, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং নান্দনিক ডিজাইনের এক অনুপম নিদর্শন। বিশ্বকাপে শেষ ষোলোর একটি ম্যাচসহ মোট ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এ স্টেডিয়ামে।