বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছিল দুজনকেই আউট করার। কিন্তু ভাগ্য যেন সঙ্গে ছায়ার মতো ছিল ইশান কিশান আর বিরাট কোহলির। বারকয়েক আউট থেকে বেঁচে যাওয়ার পর তারা রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছেন স্বাগতিক বোলারদের ওপর।
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটিকেই ডাবলে রূপান্তরিত করেছেন তরুণ ইশান কিশান। সেটাও আবার ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরিতে। সেঞ্চুরি পেয়েছেন ভারতীয় ব্যাটিং স্তম্ভ বিরাট কোহলিও।
সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে ৪০৯ রানের পাহাড় গড়েছে ভারত। বাংলাদেশের বিপক্ষে যেটি তাদের রেকর্ড দলীয় সংগ্রহ। এমনকি টাইগারদের বিপক্ষে যে কোনো দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড এখন এটি।
এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ভারতের সবচেয়ে বড় দলীয় সংগ্রহটি ছিল ৪ উইকেটে ৩৭০ রানের। ২০২১ সালে মিরপুরে এই রেকর্ড গড়েছিল ভারত।
আজ (শনিবার) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেটের দেখা পান মেহেদি হাসান মিরাজ। নিজের প্রথম বলে এলবিডব্লিউয়ে ফিরিয়ে দেন অভিজ্ঞ শিখর ধাওয়ানকে (৩)।
মিরাজের ঘূর্ণি ডেলিভারিটি ডিফেন্ড করেছিলেন ধাওয়ান। বল প্যাডে লেগে গেলে আবেদন করেন বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা। কিন্তু আম্পায়ার সে আবেদনে সাড়া দেননি। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ এবং জিতে যায়।
নিজের পরের ওভারে আরও একটি উইকেট পেতে পারতেন মিরাজ। এবার শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছিলেন কোহলি। কিন্তু সহজ ক্যাচ ফেলে দেন লিটন। ১ রানে জীবন পান কোহলি।
এরপর বড় জুটি গড়ে তোলেন কিশান আর কোহলি। ইনিংসের ১৯ আর ২০তম ওভারে দুজনেরই আউটের সম্ভাবনা জেগেছিল। মোস্তাফিজের বলে কোহলি মিডঅফে ক্যাচ তুললে সেটি তালুবন্দী করেন লিটন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি তার হাতে পড়ার একটু আগে মাটি ছুঁয়ে গেছে। কোহলি তখন ২২ রানে।
পরের ওভারে মিরাজের বলে ইশান কিশানের ক্যাচ নিয়েছিলেন সাকিব। ডিপমিডউইকেটে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্তভাবে বলটি ধরেন সাকিব। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল না, ক্যাচ হয়েছে কিনা। আম্পায়ার চেক করে দেখেন, এবারও বল মাটিতে স্পর্শ লেগেছে। ব্যক্তিগত ৮৪ রানে বেঁচে যান কিশান।
১৫ রানে ভারত প্রথম উইকেট হারানোর পর কিশান-কোহলি মিলে গড়েন ১৯০ বলে ২৯০ রানের বিধ্বংসী জুটি। এর মধ্যে বেশি ভয়ংকর ছিলেন কিশান।
৮৫ বলে ঝোড়ো সেঞ্চুরি করা এই বাঁহাতি ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটিকে রূপ দিয়েছেন ডাবলে, ১২৬ বলেই। যেটি কিনা ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড।
শেষতক এই ব্যাটারকে সাজঘরের পথ দেখান তাসকিন আহমেদ। ১৩১ বলে ইশানের ২১০ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে ছিল ২৪টি চারের সঙ্গে ১০টি ছক্কার মার।
এরপর টানা দুই ওভারে আইয়ার আর রাহুলকে আউট করেন এবাদত। ৩ রান করে আইয়ার হন লিটন দাসের ক্যাচ, লোকেশ রাহুলকে (৮) বোল্ড করেন টাইগার পেসার।
কোহলি তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, চতুর্থ বাংলাদেশের বিপক্ষে। ভারতীয় ব্যাটিং স্তম্ভকে শেষতক মিরাজের ক্যাচ বানান সাকিব। ৯১ বলে কোহলির ১১৩ রানের ইনিংসে ছিল ১১ চার আর ২ ছক্কা।
শেষদিকে অক্ষর প্যাটেল ১৭ বলে ২০ আর ওয়াশিংটন সুন্দর ২৭ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে চারশোর্ধ্ব সংগ্রহ এনে দেন।
বাংলাদেশের এবাদত হোসেন, সাকিব আল হাসান আর তাসকিন আহমেদ নেন দুটি করে উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমান আর মেহেদি হাসান মিরাজের শিকার একটি করে।
৪১০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার আগে এমনিতেই হেরে বসেছিলো যেন বাংলাদেশ। তবুও বড় রান তাড়া করতে নেমে ব্যাটারদের কাছ থেকে যে দায়িত্বশীল ব্যাটিং আশা করেছিলো সবাই, তার ছিটেফোটাও দেখা গেলো না।
বরং, একের পর এক উইকেট হারিয়ে ৩৪ ওভারে ১৮২ রান তুলতেই অলআউট হয়ে গেলো বাংলাদেশের ব্যাটাররা। যার ফলে ২২৭ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজয় বরণ করে নিতে হলো টাইগারদের। ভারতের ওপেনার ইশান কিশান একা যে রান (২১০) তুললো, তার চেয়েও ২৮ রান কম করেছে পুরো বাংলাদেশ দল।
সাকিব আর হাসান সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন। ২৯ রান করেন লিটন দাস। ইয়াসির আলী রাব্বি ২৫ এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আউট হন ২০ রান করে। শেষ দিকে তাসকিন আর মোস্তাফিজের দৃঢ়তা পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমিয়েছিলো শুধু। তাসকিন অপরাজিত থাকেন ১৭ রানে। ২টি ছক্কা মারেন তিনি। ১৩ রান করে আউট হন মোস্তাফিজ।
আগের দুটি ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজের একক কৃতিত্বে বলা যায় জিতেছে বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচেই অসাধারণ ব্যাটিং এবং বোলিং করেছেন তিনি। তার কারণে প্রথম ম্যাচে নিশ্চিত হারতে বসা ম্যাচটিতে জিতেছিলো টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচেও ৬৯ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর অসাধারণ একটি সেঞ্চুরি করে ম্যাচ বাঁচিয়েছিলেন তিনি।