‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রীড়াযজ্ঞ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের অপেক্ষা ফুরিয়ে মরুর বুকে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। স্বাভাবিকভাবেই আয়োজনের দিক থেকে কোনো কমতি রাখেনি আয়োজক দেশ কাতার। এর মধ্যেই শেষ হয়েছে যাবতীয় প্রস্তুতি। প্রস্তুত নান্দনিক সব ভেন্যুও। কাতারের পাঁচটি শহরের আটটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপ।
আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর উদাহরণ হয়ে ওঠা স্টেডিয়ামগুলো যেনো মরুর বুকে ফুটন্ত একেকটি পদ্ম। শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, স্টেডিয়ামগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। দেশটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কথা বিবেচনা করে স্টেডিয়ামগুলোকে করা হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং পরিবেশবান্ধব।
কোথায় খেলবেন মেসি-রোনালদো-নেইমাররা— এ নিয়ে সমর্থকদের আগ্রহের কমতি নেই। চলুন এক নজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কাতারের সেই সব নান্দনিক স্টেডিয়ামগুলোতে। ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ থাকছে লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম।
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম
রাজধানী দোহা থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার উত্তরে অত্যাধুনিক লুসাইল শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম। দুই দশক আগেও দোহার বর্ধিত এই অংশে শহরের কোনো অস্তিত্ব ছিলো না।
আধুনিক ও পরিকল্পিত শহরের এ ভেন্যুটিও সবচেয়ে আলাদা ও আধুনিক। ফনার লণ্ঠনে দেখা আলো-ছায়ার পারস্পরিক প্রকাশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে এ স্টেডিয়ামের নকশা। সম্মুখভাগে অবস্থিত আরব ও ইসলামি বিশ্বের প্রাথমিক সভ্যতার উত্থানকালের শিল্প ও আসবাবপত্রের জটিল নকশা স্টেডিয়ামটির কাঠামোগত সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছে। এর চারপাশে রয়েছে পানির কৃত্রিম ফোয়ারা। প্রবেশ পথে পার হতে হবে একটি বিশেষ সেতু। গরম আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিশাল স্টেডিয়ামে থাকছে নিজস্ব সৌরশক্তিচালিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা এবং উপরে থাকছে কাচের বিশেষ আবরণ।
৭৬৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করে পাঁচ বছর ধরে তৈরি করা এই স্টেডিয়ামটির নকশা তৈরি করেছে বিখ্যাত ব্রিটিশ প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান 'ফোস্টার প্লাস পার্টনার্স গ্রুপ লিমিটেড'। নির্মাণে যৌথভাবে কাজ করেছে কাতারের ঠিকাদার কোম্পানি 'এইচবিকে কন্ট্রাকটিং কোম্পানি' এবং চীনের 'চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন'। গাড়ি ও মেট্রো রেলযোগে পৌঁছানো যাবে এ স্টেডিয়ামে। সম্পূর্ণ আধুনিক নগরী হওয়ায় মাস্টার প্ল্যানিংয়ে মাধ্যমে ট্রাম সিস্টেম এবং চারদিকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে সবুজের সমারহ। বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলে এখানে স্কুল, দোকান, ক্যাফে, খেলাধুলার সুবিধা এবং ক্লিনিকসহ একটি বহুমুখী কমিউনিটি তৈরি করা হবে। ধারণক্ষমতার দিক থেকে আট ভেন্যুর মধ্যে বৃহত্তম। বিশ্বের দশম বৃহত্তম এই ফুটবল স্টেডিয়ামে এক সাথে ৮০ হাজার দর্শক দেখতে পারবেন মেসি-নেইমাদের ফুটবলশৈলী। এই ভেন্যুতে বিশ্বকাপের ১০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।