‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রীড়াযজ্ঞ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের অপেক্ষা ফুরিয়ে মরুর বুকে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। স্বাভাবিকভাবেই আয়োজনের দিক থেকে কোনো কমতি রাখেনি আয়োজক দেশ কাতার। এর মধ্যেই শেষ হয়েছে যাবতীয় প্রস্তুতি। প্রস্তুত নান্দনিক সব ভেন্যুও। কাতারের পাঁচটি শহরের আটটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপ।
আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর উদাহরণ হয়ে ওঠা স্টেডিয়ামগুলো যেনো মরুর বুকে ফুটন্ত একেকটি পদ্ম। শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, স্টেডিয়ামগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। দেশটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কথা বিবেচনা করে স্টেডিয়ামগুলোকে করা হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং পরিবেশবান্ধব।
কোথায় খেলবেন মেসি-রোনালদো-নেইমাররা— এ নিয়ে সমর্থকদের আগ্রহের কমতি নেই। চলুন এক নজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কাতারের সেই সব নান্দনিক স্টেডিয়ামগুলোতে। ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে থাকছে স্টেডিয়াম ৯৭৪।
স্টেডিয়াম ৯৭৪
বিশ্বকাপের অন্যতম বড় চমক 'স্টেডিয়াম ৯৭৪'। নামের মতোই এই স্টেডিয়ামে রয়েছে অদ্ভুত একটি ব্যাপার। বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য কাতার যে আটটি স্টেডিয়াম তৈরি করেছে, তার মধ্যে এই স্টেডিয়ামটি পরিবহনযোগ্য— অর্থাৎ এই স্টেডিয়াম পরিবহন করে অন্য জায়গায় স্থানান্তরযোগ্য!
এই ভেন্যুটি নির্মাণ করতে মোট ৯৭৪টি শিপিং কন্টেইনার ব্যবহার করা হয়েছে বলেই নাম দেওয়া হয়েছে 'স্টেডিয়াম ৯৭৪'। এছাড়া কাতারের আন্তর্জাতিক ডায়াল কোডও ৯৭৪। শিপিং কন্টেইনার দিয়ে বাহ্যিক অবকাঠামো তৈরি হলেও এর মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে স্টিলের ওপর। স্পেনের স্থাপত্যবিষয়ক সংস্থা 'ফেনউইক ইরিবারেন আর্কিটেক্টস'- এর ডিজাইন করা স্টেডিয়ামটি হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কয়েক মিনিট দূরে অবস্থিত।
বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা অন্য স্টেডিয়ামগুলোর মতো এখানে শীতল রাখার জন্য বাড়তি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কারণ সন্ধ্যার পর পার্শ্ববর্তী সমুদ্র থেকেই সেখানে শীতল বাতাস আসে। এর বিশেষ নকশাও ভেতরের পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখবে। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ৪৫ লাখ বর্গমিটারের এই স্টেডিয়ামটি এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২১ সালের নভেম্বরে উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনের সময় স্টেডিয়ামটির নাম ছিল রাসা আবু আবুদ। উদ্বোধনের দিন দশেক পর এর নামকরণ করা হয় স্টেডিয়াম-৯৭৪। নাম পরিবর্তনের দিন সিরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে স্টেডিয়ামটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বকাপ শেষে কিন্তু এই স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলা হবে! কাতার জানিয়েছে, স্টেডিয়ামটি তৈরিতে ব্যবহৃত শিপিং কন্টেইনারগুলো খুলে জাহাজে করে অন্য একটি উন্নয়নশীল দেশে নিয়ে যাওয়া হবে। এই স্টেডিয়াম ব্যবহার করে যাতে তারা নিজেদের ফুটবলের উন্নতি করতে পারে। এটা বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম অস্থায়ী ভেন্যু। ৪০ হাজার দর্শক এক সাথে এই স্টেডিয়ামে ম্যাচ উপভোগ করতে পারবেন। বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর একটি ম্যাচসহ মোট ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠে।