রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা! দাঁড়িয়ে গ্যাবার গ্যালারি! উৎকন্ঠায় দুই দলের সমর্থকরাই। পেন্ডুলামের মতো ম্যাচটা দুলছিল দুই দিকেই। জিততে পারে যে কেউ! ঠিক তখনই কীনা অধিনায়ক বল তুলে দিলেন মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে। শেষ ওভারের ৬ বলে ১৬ রান আটকাতে হবে তাকে। ঠিক এমনই দৃশ্যপটে সত্যিকারের সমর্থকের দম বন্ধই হয়ে আসে। ছক্কা হজম করে উত্তেজনা বাড়ালেও মোসাদ্দেক নিরাশ করলেন না। নাটকীয়তা ছড়াল ঠিকই কিন্তু শেষ হাসি বাংলাদেশেরই!
শেষ ওভার করার জন্য সাকিব আল হাসান বল তুলে দিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের হাতে। ব্যাট করছেন ব্রাড ইভান্স এবং রায়ান বার্ল। প্রথম বলে দিলেন ১ রান। দ্বিতীয় বলে ব্রাড ইভান্স ছক্কা হাঁকাতে গেলেন। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে বলটি তালুবন্দী করে নিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ৪ বলে প্রয়োজন পড়ে ১৫ রান।
তৃতীয় বলটি উইকেটরক্ষকের পেছন দিয়ে বাউন্ডারি মেরে দেন ব্রাড ইভান্স। চতুর্থ বলে দিলেন ছক্কা। ২ বলে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন পড়ে ৫ রান। পঞ্চম বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে মিস করেন ইভান্স। বল ধরে স্ট্যাম্প ভেঙে দিতে মোটেও বিলম্ব করেননি নুরুল হাসান সোহান। ১ বলে প্রয়োজন ৫ রান।
শেষ বলে জিম্বাবুয়ের ব্যাটার ব্লেসিং মুজারাবানি। শেষ বলেও উইকেট পেলেন মোসাদ্দেক। এবারও স্ট্যাম্পিং। আউট ধরে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়রাও মাঠ ছেড়ে উঠে যায়। কিন্তু রিপ্লাইতে দেখা যায়, বল স্ট্যাম্পে আসার আগেই বল ধরে ফেললেন নুরুল হাসান সোহান।
থার্ড আম্পায়ার রিভিউ করে দিলেন নটআউট এবং ঘোষণা করলেন নো বল। ফলে এক রান যোগ হওয়ার পাশাপাশি দু’দলকে আবারও মাঠে নামিয়ে আনা হয় এবং ফ্রি-হিট দিয়ে শেষ বলটি করতে বলা হয়। শেষ বলে মুজারাবানি কোনো রান করতে পারেননি।
ব্রিসবেনের দ্য গ্যাবায় স্নায়ুক্ষয়ী এই ম্যাচে বাংলাদেশের করা ১৫০ রানের জবাব দিতে নেমে ১৪৭ রানে থেমে যায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ফলে ৩ রানে জিতে গেলো বাংলাদেশ।
এর আগে দিনের শুরুতে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এ ম্যাচে এক পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে টাইগাররা। মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গায় খেলছেন ইয়াসির আলী রাব্বি।
দলের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম সাফল্য পায় জিম্বাবুয়ে। রানের খাতা খোলার আগেই ব্লেসিং মুজারাবানির বলে উইকেটকিপার রেগিস চাকাভার তালুবন্দী হন সৌম্য।
শুরুতেই উইকেট হারানোর পর দেখেশুনে খেলতে থাকেন লিটন দাস ও শান্ত। ধীরেসুস্থে ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছিলেন দুজন। তবে ষষ্ঠ ওভারে মুজারাবানিকে স্কুপ করতে গিয়ে চাতারার হাতে ধরা পড়েন তিনি। এর আগে করেন ১৪ রান।
চার নম্বরে নেমে শুরু থেকেই মেরে খেলার চেষ্টা করতে থাকেন সাকিব আল হাসান। অন্যপ্রান্তে ধীরগতির ইনিংস খেলতে থাকেন শান্ত। অনেকটা চাপের মুখে মারতে গিয়ে শন উইলিয়ামসের বলে মুজারাবানির তালুবন্দী হন সাকিব। এর আগে খেলেন ২৩ রানের ইনিংস।
একপ্রান্ত আগলে খেলা শান্ত ৪৫ বলে অর্ধশতকের দেখা পান। ফিফটির পর আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৫৫ বলে ৭১ রান করে সিকান্দার রাজার বলে আউট হন এ ওপেনার।
শেষদিকে আফিফ হোসেনের ২০ বলে ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংসে লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এর আগে মোসাদ্দেক হোসেন ৭ ও নুরুল হাসান সোহান ১ রানে আউট হন।
জিম্বাবুয়ের হয়ে গারাভা ও মুজারবানি দুটি এবং রাজা ও শন উইলিয়ামস একটি করে উইকেট শিকার করেন।