মন্থর উইকেট। পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের শুরুটাও হলো মন্থর। তবে শেষ দিকে উঠল ঝড়। তাতে দলটি পেল বড় পুঁজি। পরে তাদের পেস-স্পিনের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ল হংকংয়ের ব্যাটিং। বিশাল জয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে উঠল পাকিস্তান।
বাঁচা-মরার লড়াইয়ে শুক্রবার পাকিস্তানের জয় ১৫৫ রানে। শারজাহতে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে হংকংকে স্রেফ ৩৮ রানে গুটিয়ে দেয় বাবর আজমের দল।
৮, ২, ০, ৬, ১, ৪, ৩, ৩, ০, ১, ০। না, কোনো ফোন নম্বরের ডিজিট ভেবে ভুল করবেন না যেন। এ ছিল হংকংয়ের ১১ ব্যাটসম্যানের রানের সংখ্যা। ইনিংস সর্বোচ্চ ১০ রান এসেছে জনাব অতিরিক্তের ‘ব্যাট’ থেকে। হংকংয়ের ব্যাটসম্যানদের এমন নাজেহাল দশাই করে ছেড়েছে পাকিস্তান।
শুরুটা করেছিলেন নাসিম শাহ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে অধিনায়ক নিজাকাত খান আর বাবর হায়াতকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পঞ্চম ওভারে শাহনেওয়াজ দাহানি আঘাত হানেন হংকং শিবিরে। ইয়াসিম মর্তুজাকে ব্যক্তিগত দুই রানে ফেরান খুশদিল শাহর ক্যাচ বানিয়ে।
২৫ রান তুলে পাওয়ারপ্লে যখন শেষ করছে হংকং, তখনো কি কেউ ঘুণাক্ষরে টের পেয়েছিল এই হতে যাচ্ছে দলটির নিয়তি? বিশেষ করে যারা গেল ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে তুলেছিল ১৫০ রান! দুই স্পিনার শাদাব খান আর মোহাম্মদ নওয়াজের ভেল্কিতেই ‘বিপদ’ টা ‘বিপর্যয়ে’ রূপ নেয় হংকংয়ের জন্য।
৭ থেকে ১১ ওভারে টানা বল করেছেন দুজন মিলে, প্রতি ওভারেই অন্তত একটা করে উইকেট তুলেছেন। অষ্টম ওভারে নওয়াজ আর ১১তম ওভারে শাদাব নিয়েছেন দুটো করে উইকেট। তাতেই নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে অলআউটের লজ্জায় পড়ে দলটি। ১৫৫ রানের হার সঙ্গী হয় তাদের।
এর আগে পাকিস্তানকে ইনিংসের শুরু থেকেই বেশ চাপে রেখেছিল হংকং। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাবরদের। দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান ধীরগতিতে সূচনা করেন ইনিংসের। বাবর তাও একটু ‘হাত খুলে’ খেলছিলেন। ৮ বলে তিনি করেছেন ৯ রান। ওদিকে রিজওয়ান যেভাবে ইনিংস শুরু করেছেন, সেটা বোধহয় আজকাল ওয়ানডেতেও কোনো ব্যাটসম্যান করেন না। ৯ বল খেলে তিনি করেন মাত্র ৪ রান। ফলে পাকিস্তান তাদের উদ্বোধনী জুটি থেকে পায় ১২ রান, তাও ১৭ বল খরচায়।
তৃতীয় ওভারের ৫ম বলে নিজের বিপদ ডেকে আনেন বাবর। অফ স্পিনার এহসান খান বলটা খানিকটা হাওয়ায় ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন বাবরকে। ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে পাকিস্তান অধিনায়ক ফিরতি ক্যাচ দেন এহসানকে। ১২ রানে পাকিস্তান হারায় নিজেদের প্রথম উইকেট। ধীরগতির শুরুর পর দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে খুইয়ে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে খানিকটা অস্বস্তিতেই পড়ে যায় দলটি।
এরপর ফখর জামানকে সঙ্গী হিসেবে পান রিজওয়ান। তবে দুজনের রান তোলার গতি ভাবনায় রেখেছিল পাকিস্তানকে। দশ ওভার শেষে দলটা তোলে মাত্র ৬৮ রান। ১০০ ছুঁতে লেগে যায় ১৪ ওভার। এর আগের ওভারেই অবশ্য ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন রিজওয়ান, তবে সেটা আসে ৪২ বল খেলে।
দলীয় রান তিন অঙ্কে পৌঁছানোর পরই যেন ঘুম ভাঙল দুই ব্যাটসম্যানের। ১৫তম ওভারে এক ছক্কা মেরে যার শুরুটা করলেন ফখর। পরের ওভারে আরও এক চার আর এক ছক্কায় নিজে পৌঁছে যান ফিফটিতে। এরপরই অবশ্য বিদায় নেন তিনি। ভাঙে ১১৬ রানের জুটিটি।
খেলার যা পরিস্থিতি ছিল তাতে তখন আসিফ আলিরই ক্রিজে আসার কথা, সেখানে পাকিস্তান পাঠায় খুশদিল শাহকে। সে সিদ্ধান্তটাই দারুণভাবে কাজে লেগে যায় দলের জন্য। একপাশে ফিফটি করা রিজওয়ান হাত খুলে খেলতে শুরু করেছেন, অপর পাশে নতুন ব্যাটসম্যান খুশদিল শুরু থেকেই ছিলেন মারমুখী। তাতে চাপ সামলে পাকিস্তান লড়াকু স্কোরের আশাই দেখছিল।
তবে পাকিস্তানের স্কোরের সঙ্গে ‘লড়াকু’ শব্দটা না বসে ‘বিশাল’ বিশেষণটা বসছে খুশদিলের কল্যাণে। শেষ ওভারে চারটা ছক্কায় যে তিনিই স্কোরটা নিয়ে গেছেন হংকংয়ের নাগালের বাইরে! ইনিংস শেষে তিনি অপরাজিত থাকেন ১১ বলে ৩৫ রান নিয়ে, আর পাকিস্তান পেয়ে যায় ১৯৩ রানের বিরাট এক পুঁজি। তবে সেটা যে যথেষ্ট’র চেয়েও বেশি কিছু ছিল, বোলারদের কল্যাণে তা প্রমাণিত হয়েছে পরের এক ঘণ্টায়।