কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ৪০ মিনিট দূরত্ব৷ রামু উপজেলার এক প্রান্তে খুনিয়াপালং। সেই খুনিয়াপালং অরণ্যে বন অধিদপ্তর ২০ একর জমি আজ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দিয়েছে। মন্ত্রণালয় সেটি আজ বাফুফের কাছে হস্তান্তর করেছে৷
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আলী রেজা বলেন, এই হস্তান্তরে কোনো বিনিময়মূল্য নেই । অসীম সময়ের জন্য এই জমির অধিকার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সেটা বাফুফের দায়িত্বে দিয়েছে। তবে বন অধিদপ্তর কিছু শর্ত সাপেক্ষে এই জমি আমাদের প্রদান করেছে। সেই শর্ত মেনে বাফুফেকে এখানে সেন্টার অব এক্সিলেন্স নির্মাণ করতে হবে ৷
বাফুফে সহ-সভাপতি ও ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক সেই শর্ত পূরণের অঙ্গিকার করে বলেন, আমরা অবশ্যই প্রাকৃতিক সম্পদ ও বনের পরিবেশ রক্ষা করেই ফুটবল স্থাপনা করব৷ এটা এমনভাবে নির্মাণ করব যাতে দর্শনীয় স্থান হিসেবে মানুষ এখানে আসে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই জায়গা দেওয়ার পেছনে এটিও একটা কারণ '৷
সরকারের জমি এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরে অনেক সময় লাগে। সেক্ষেত্রে বাফুফের এই কাজটি হয়েছে খুবই স্বল্প সময়ে পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের ফুটবলের এক বিশেষ দিন। এত কম সময়ের মধ্যে জমি হস্তান্তর হয় না৷ এজন্য প্রধানমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, কক্সবাজারের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই।
বাফুফে যে জায়গায় সেন্টার অব এক্সিলেন্স করবে এর পাশেই বন্যহাতির অভয়ারণ্য৷ স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর ভাষ্য মতে, এই বনে ১৫-১৭টি হাতি রয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হলে বন্য হাতির লোকালয়ে চলে আসার সম্ভাবনা থাকবে৷ হাতির বিষয়টি বিবেচনা করেই বাফুফে সতর্কতার সাথে কাজ করার প্রস্তুতি নেবে।
রামুর এই অরণ্য বাফুফে বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সংসদ সদস্য সারওয়ার কমল বলেন, আমরা কক্সবাজারের আরও দুই জায়গা দেখেছিলাম, বিমানবন্দরের নৈকট্য, হিমছড়ি সড়ক আগামীতে রেলপথ নির্মাণসহ সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে বাফুফে এটি পছন্দ করেছে ৷
বাফুফে এক বছরের মধ্যেই এই অরণ্যে ফুটবল উপযোগী করার পরিকল্পনা। কিছু দিনের মধ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগ ও এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদারের বিজ্ঞপ্তি দেবে। দুটি ফুটবল মাঠ, আর্টিফিশিয়াল টার্ফ, চার তলা আবাসিক ভবন, মেডিকেল সেন্টারসহ সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন করে সেন্টার অব এক্সিলেন্সের সকল কাজ আগামী বছরের মধ্যে শেষ করতে চায় দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাফুফে এই সেন্টার অব এক্সিলেন্স নির্মাণের জন্য সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার পাবে৷ ফিফার দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন কর্মকর্তা প্রিন্স রৌউফ বলেন, অর্থায়ন করার আগে আমরা জমির কর্তৃত্ব আমাদের অধিভুক্ত সংস্থার কাছে থাকতে হয়। সেই কাজটি হয়েছে। বাফুফের সাথে এখন আমরা পরবর্তী পর্যায়ে কাজ শুরু করব। দক্ষিণ এশিয়ায় ফিফার অর্থায়নে এত বড় প্রকল্প রয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানে।
বাফুফে এর আগে ফিফা থেকে এত বড় অর্থায়ন পায়নি। সিলেট বিকেএসপির জন্য ফিফা অর্থায়ন করেছিল। ফিফার অর্থে সিলেটে বাফুফে একাডেমি হলেও পরবর্তীতে সেটি চলমান থাকেনি অর্থাভাবে৷ ফিফার অর্থে এত বড় প্রকল্প দাঁড়ালেও ভবিষ্যৎ চলা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারওয়ার আলম ২০ একর জমি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আলী রেজার কাছে হস্তান্তর করেন৷ তিনি এটি বাফুফে সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মানিকের কাছে দেন। এ সময় সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কক্সবাজারের বাসিন্দা বিজন বড়ুয়া, রামু উপজেলার ইউএনও প্রণয় চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।