সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

না ফেরার দেশে চট্টগ্রামের বর্ণাঢ্য ক্রীড়া সংগঠক প্রফেসর শায়েস্তা খান

ক্রীড়া প্রতিবেদক

২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন

না ফেরার দেশে চট্টগ্রামের বর্ণাঢ্য ক্রীড়া সংগঠক প্রফেসর শায়েস্তা খান

চট্টগ্রামের বর্ণাঢ্য ক্রীড়া সংগঠক প্রফেসর শায়েস্তা খান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আজ আসরের নামাজের পর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মিসকিন শাহ মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) ভোর পাঁচটায় নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রফেসর শায়েস্তা খান দীর্ঘদিন ধরে কোলন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছিলেন। 

তাঁর এই মৃত্যু সংবাদে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামের শিক্ষা, ক্রীড়াঙ্গন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করলো। ষাটের দশকের প্রতিবাদী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন ও ক্রীড়া মাঠ— সর্বত্র দীপ্ত পদচারণা ছিল প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকের। 

১৯৪৫ সালের ১০ জুন চট্টগ্রাম নগরের আলকরণে জন্ম নেওয়া শায়েস্তা খানের জীবন ছিল কর্মময়। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও সরকারী কমার্স কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ষাটের দশকে সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের শীর্ষ ছাত্রনেতাদের একজন ছিলেন তিনি। গণঅভ্যুত্থানসহ সমসাময়িক রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সক্রিয় ও বলিষ্ঠ।

পেশাগত জীবনে প্রফেসর শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ, ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে খেলা ছিল তাঁর অন্তপ্রাণ। ১৯৬১-৬২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে যে পথচলা শুরু, তা আমৃত্যু অব্যাহত ছিল। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি একই কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে সরকারি কমার্স কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে খেলাধুলার প্রসারে তিনি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি ২০০১ সালে তাঁকে বর্ষসেরা ক্রীড়া সংগঠক নির্বাচিত করে সম্মানিত করে। তিনি চিটাগং মেট্রোপলিটন কমার্স কলেজ ও উদয়ন-ছোটদের স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন।

শিক্ষকতা ও ক্রীড়া সংগঠনের পাশাপাশি তাঁর কলমও ছিল সচল। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পরপরই তিনি ‘দৈনিক মিছিল’ নামে একটি পত্রিকা বের করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিভিন্ন দৈনিকে কলাম লিখে সমাদৃত হন। তাঁর লেখা ‘পঞ্চাশ দশকের চট্টগ্রাম এবং আমার ছেলেবেলা’ বইটি শহরের ইতিহাসের এক অনন্য দলিল।

প্রফেসর শায়েস্তা খানের আদি নিবাস নগরের চান্দগাঁওয়ের হায়দার আলী নাজির বাড়িতে। তাঁর পিতা মরহুম আজিজ উল্লাহ খান এবং মাতা মরহুমা মোহসেনা বেগম। 

তিনি এক পুত্র ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞ ডা. ইশতেয়াক আজিজ খান, কন্যা ফারজানা জেসমিন খান, জামাতা মেরিনার ক্যাপ্টেন ফসিউর রহমান ও নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য ছাত্র, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। 


সর্বশেষ

উপরে নিয়ে চলুন