ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের একটা বিখ্যাত ডায়ালগ একটু বদলে দিলে, বেশ সুন্দর করে মিলে যাবে সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ারের সঙ্গে। সাকিব খবর দেখে না, খবর শুনে না, খবর তৈরি করে। বছরখানেক আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি নিজেও বলেছিলেন, সংবাদ মাধ্যমের প্রয়োজনেই যেন সাকিবকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে রেখে দেয়া হয়, না হলে, এত নিউজের খোরাক যোগাবে আর কোন ক্রিকেটার।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আলোচনায় থাকতে পছন্দ করেন সাকিব আল হাসান। সেটা হোক ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক। শিরোনামে থাকাটাই যেন মূল লক্ষ্য সাকিবের। ২০১০ এ শুরু হয়েছিল তার এই ভিন্ন পথ দিয়ে হেঁটে চলা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন এক দর্শক সাইডস্ক্রিনের পাশে হাঁটতে থাকায়, ব্যাট উঁচিয়ে তাকে হুমকি দেন তিনি।
বিতর্ক শব্দটা সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ারে নতুন কিছু নয়। ২০০৬ এ অভিষেক হওয়ার পর থেকেই, নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে থাকতে পছন্দ করেন বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার। দর্শকদের সঙ্গে বিতর্কিত আচরণ, টিভি ক্যামেরায় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, জাতীয় দল ছেড়ে দেয়ার হুমকিসহ মাঠে আম্পায়ারদের সঙ্গে বাজে আচরণ, বাজিকরদের সঙ্গে যোগাযোগ, কী করেননি সাকিব? এসব কারণে বিসিবি এবং আইসিসি থেকে নিষিদ্ধও হয়েছেন বেশ কয়েক দফায়। এবার সে তালিকায় যুক্ত হলো বেটিং সাইটের সারোগেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি।
২০১৩ সালে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ম্যাচ চলাকালীন দর্শকের কটূক্তিতে খেপে যান সাকিব। গ্যালারিতে উঠে কলার চেপে ধরেন সে দর্শকের। পরে মাঠের নিরাপত্তা কর্মীদের হস্তক্ষেপে সুরাহা হয় ঘটনার। ২০১৪'তে দু দুটি ঘটনার জন্ম দেন তিনি। ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন টেলিভেশন ক্যামেরায় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে নিষিদ্ধ হন তিন ম্যাচ। একই বছর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন এক দর্শককে পেটান সাকিব। অপরাধ, সাকিবের স্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেছিল সে দর্শক।
একই বছর আবার বিসিবির মুখোমুখি সাকিব। অনুমতিপত্র না নিয়ে সিপিএলে খেলতে যাওয়ায়, নিষিদ্ধ হন ৬ মাস। ২০১৫'তে বিপিএলের এক ম্যাচে আম্পায়ার তানভীর আহমেদের সঙ্গে অসদাচরণ করেও এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব।
২০১৯ এ তো ছাড়িয়ে যান সব কিছুকে। বাজিকরের সঙ্গে যোগাযোগের ঘটনা লুকিয়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় পরেন সাকিব আল হাসান। ফিরে এসেও যে খুব ভদ্র ছেলেটি হয়েছিলেন তা কিন্তু নয়। ২০২১ এ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত না মেনে স্টাম্পে লাথি দিয়ে সমালোচিত হন সাকিব। নিষিদ্ধ হন তিন ম্যাচ।
এগুলো ছাড়াও নানা সময় বোর্ডের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন সাকিব। বিশ্বকাপের ফটোসেশনে অংশ না নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ২০১৯ এ। বিপিএল ফাইনালের আগে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনেও আসেননি সাকিব। করেছেন বিজ্ঞাপণের শুটিং, ভেঙেছেন কোভিড প্রটোকল।