প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতে হেরে আগেই গ্রুপ পর্ব থেকে বার্সেলোনার বিদায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। বুধবার রাতে ‘প্রায় নিশ্চিত’কে ‘নিশ্চিত’ বানিয়ে দিয়েছে ইন্টার মিলান। ভিক্তোরিয়া প্লজেনকে ইন্টার ৪-০ গোলে হারানোয় দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছে বার্সা। গতকাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদ আর আয়াক্সেরও। অন্যদিকে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে লিভারপুল, ইন্টার মিলান ও পোর্তো।
জেনে নেওয়া যাক, বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোয় কী ঘটেছে-
গ্রুপ ‘এ’
নাপোলি ৩-০ রেঞ্জার্স
প্রথম চার ম্যাচ জিতে আগেই শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল নাপোলির। গত রাতে ইতালিয়ান ক্লাবটি পেয়েছে টানা পঞ্চম জয়ও। জিওভান্নি সিমিওনের জোড়া গোল আর লিও স্টিগার্ডের এক গোলে রেঞ্জার্সকে ৩-০ ব্যবধানে হারায় নাপোলি। এটি ছিল গ্রুপে রেঞ্জার্সের টানা পঞ্চম হার।
জেনে রাখা ভালো: চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে ইতালির প্রথম ক্লাব হিসেবে ২০ বা তার বেশি গোল করেছে নাপোলি।
আয়াক্স ০-৩ লিভারপুল
শেষ ষোলো নিশ্চিত করতে ড্র দরকার ছিল লিভারপুলের। আয়াক্সের মাঠে গিয়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল পেয়েছে ৩-০ গোলের দাপুটে জয়। প্রথমার্ধের শেষ দিকে প্রথম গোলটি করেন মোহাম্মদ সালাহ, এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে যা তাঁর ষষ্ঠ গোল। বিরতির পর প্রথম ছয় মিনিটের মধ্যে অন্য গোল দুটি করেন দারউইন নুনিয়েজ ও হার্ভি এলিয়ট।
জেনে রাখা ভালো: এটি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের ১৫০তম ম্যাচ। ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর মধ্যে এই মাইলফলক আগেই স্পর্শ করেছে নয়টি দল, ইংলিশ ক্লাব হিসেবে লিভারপুল চতুর্থ।
গ্রুপ ‘বি’
ব্রুগা ০-৪ পোর্তো
আগের লেগে পোর্তোর মাঠে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছিল ব্রুগা। ফিরতি লেগে বেলজিয়ামের ক্লাবটির ওপর শোধ তুলেছে পোর্তো, জয় তুলে নিয়েছে একই ব্যবধানে। পর্তুগিজ ক্লাবটির হয়ে দুটি গোল করেন ইরানিয়ান ফরোয়ার্ড মেহদি তেরেমি। অন্য দুটি গোল ইভানিলসন ও স্তিফান এসতাকিওর। পোর্তো-ব্রুগা দুই দলই অবশ্য গ্রুপ পর্ব উতরে গেছে।
জেনে রাখা ভালো: ম্যাচে পেনাল্টি সেভ করেন পোর্তো গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা। এ নিয়ে ‘বি’ গ্রুপে পোর্তোর শেষ তিন ম্যাচেই পেনাল্টি রুখে দিলেন কস্তা। তিনটি ম্যাচেই কোনো গোল হজম করেননি তিনি।
আতলেতিকো মাদ্রিদ ২-২ লেভারকুসেন
মাদ্রিদে আতলেতিকো-লেভারকুসেন মুখোমুখি হওয়ার আগেই ক্লাব ব্রুগা-পোর্তো ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পোর্তোর জয়ে লেভারকুসেনের শেষ ষোলোর আশা শেষ হয়ে যায়। আতলেতিকোর তখনো আশা টিকেছিল। তবে দরকার ছিল জয়। কিন্তু দিয়েগো সিমিওনের দলকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ড্রর হতাশা নিয়ে।
ম্যাচে দুই দফায় এগিয়ে গিয়েছিল লেভারকুসেন। ইয়ানিক কারাসকো আর রদ্রিগো দি পলের সৌজন্যে দুবারই সমতা আনে আতলেতিকো। শেষ দিকে যোগ করা সময়ে পেনাল্টি থেকে গোল করে জয়েরও সুযোগ ছিল। কিন্তু কারাসকোর শট রুখে দেন লেভারকুসেন গোলরক্ষক লুকাস রাদেকি।
ফিরতি বলে হেড নেন সাউল নিগেজ, কিন্তু বারে লেগে এ দফায়ও বল জালে জড়ায়নি। ড্রয়ের ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে আতলেতিকোর।
জেনে রাখা ভালো: গত ১৩ মৌসুমে এ নিয়ে তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে জায়গা করতে পারল না আতলেতিকো।
গ্রুপ ‘সি’
ইন্টার ৪-০ প্লজেন
শেষ ষোলোয় জায়গা করে নেওয়ার মিশন ছিল ইন্টারের। আগের ৪ ম্যাচের সবকটিতে হেরে বসা ভিক্তোরিয়া প্লজেনের বিপক্ষে জয় পেতে একদমই বেগ পেতে হয়নি তাদের। দুই অর্ধে দুটি করে মোট ৪ গোল করেছে ইন্টার। এডিন জেকো করেছেন দুটি, একটি করে হেনরিখ মেখিতারিয়ান ও রোমেলু লুকাকু। এ জয়ে ‘সি’ গ্রুপে ১০ পয়েন্ট হয়ে গেছে ইন্টারের।
জেনে রাখা ভালো: ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় প্লজেনের বিপক্ষে ৭ ম্যাচ খেলে ১১ গোল করেছেন জেকো।
বার্সেলোনা ০-৩ বায়ার্ন
বার্সেলোনা ক্যাম্প ন্যুতে নামার আগেই সান সিরো থেকে খবর আসে, সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে! ভিক্তোরিয়া প্লজেনের বিপক্ষে ইন্টার মিলান জেতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ বার্সেলোনা। এই শোককে শক্তি বানিয়ে জাভি হার্নান্দেজের দলের সামনে সুযোগ ছিল ‘সান্ত্বনা’র জয় তুলে নেওয়ার। কিন্তু সেটিও পারেনি জাভি হার্নান্দেজের দল। উল্টো ঘরের মাঠে ৩-০ গোলে হেরে গেছে।
১০ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন সাদিও মানে, ৩০ মিনিটে ব্যবধান ২-০ বানিয়ে ফেলেন চুপো-মোটিং। শেষ বাঁশি বাজার আগে ৯৫ মিনিটে বায়ার্নের তৃতীয় গোলটি বেঞ্জামিন পাভারের। ৫ ম্যাচের মধ্যে শুধু প্লজেনকে হারাতে পারা বার্সা ৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়স্থান নিশ্চিত করে নেমে গেছে ইউরোপা লিগে।
জেনে রাখা ভালো: চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্নের বিপক্ষে এই নিয়ে টানা ষষ্ঠ ম্যাচ হারল বার্সা। প্রথমার্ধে বায়ার্নের গোলে বার্সা কোনো শট নিতে পারেনি। চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘরের মাঠে গত ১৫ বছরে দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা দেখল বার্সা।
গ্রুপ ‘ডি’
টটেনহাম ১-১ স্পোর্তিং
৯৫ মিনিটে হ্যারি কেইনের গোল অফসাইডে বাতিল না হলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত টটেনহাম। এর আগে প্রথমার্ধে মার্কাস এডওয়ার্ডসের গোলে এগিয়ে যায় স্পোর্তিং। দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় শেষ দিকে ৮১ মিনিটে সেই গোল শোধ করেন রদ্রিগো বেতানকুর। ঘরের মাঠে ড্র করায় নকআাউট নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে টটেনহাম। ৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে থাকলেও বাকি তিনটি দলই অন্তত ৬ পয়েন্ট নিয়ে ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে।
জেনে রাখা ভালো: স্পোর্তিংয়ে খেলা এডওয়ার্ডস ইংল্যান্ডের চতুর্থ ফুটবলার, যিনি ইংল্যান্ডের বাইরের ক্লাবের হয়ে প্রিমিয়ার লিগের দলের বিপক্ষে গোল করলেন।
ফ্রাঙ্কফুর্ট ২-১ মার্শেই
মার্শেইকে হারিয়ে গ্রুপ ‘ডি’র লড়াই জমিয়ে তুলেছে ফ্রাঙ্কফুর্ট। ঘরের মাঠের খেলায় ৩ মিনিটে ফ্রাঙ্কফুর্টকে এগিয়ে দেন দাইচি কামাদা। ২২ মিনিটে মাতেও গিয়েনদোজির গোলে সমতা ফেরায় মার্শেই। তবে পাঁচ মিনিট পরই কোলো মুয়ানির গোলে আবার এগিয়ে যায় ফ্রাঙ্কফুর্ট। প্রথমার্ধে হওয়া এই তিন গোলেই শেষ হয় ম্যাচ।
জেনে রাখা ভালো: ঘরের মাঠে এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ জিতেছে ফ্রাঙ্কফুর্ট। গোলও এই প্রথম।
এখন পর্যন্ত যে সব দল চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোয় উঠেছে
বায়ার্ন মিউনিখ, বেনফিকা, চেলসি, ক্লাব ব্রুগা, ডর্টমুন্ড, ইন্টার মিলান, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, পিএসজি, পোর্তো ও রিয়াল মাদ্রিদ।