যশোরের বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সাইদুর রহমান রাহুল। বাফুফের জাতীয় স্কুল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার পল্টন ময়দানে হবিগঞ্জের আলী ইদ্রিস স্কুলকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে সাইদুর রহমান রাহুলের স্কুল। জোড়া গোল করেছে রাহুল।
রাহুলের ফুটবলার হওয়ার গল্পটা যে কাউকেই নাড়া দেবে। লেখাপড়ার খরচ জোগাতে বেনাপোল বাজারে একটি সবজির দোকানে কাজ করে সে। এর বাইরে আবার ফুটবল খেলে কি করে?
মঙ্গলবার পল্টন ময়দানে দাঁড়িয়ে নিজের ফুটবল খেলার গল্পটা শোনালো এই কিশোর। বেনাপোল রেল ষ্টেশনের পাশে ভবারবেড় রাহুলদের বাড়ী। 'আমাদের এলাকাটা মাদকের রাজ্যের মতো। মাদকের ভয়াবহ অবস্থা সেখানে। মাদকের থাবার বাইরে থাকা কঠিন ছিল। তবে আমি সেদিকে যাইনি। আমি ফুটবলকে ভালো বেসেছি। ওসব ছেড়ে আমি সময় পেলেই ফুটবল অনুশীলন করেছি'-বলছিল রাহুল।
রাহুলের বাবা লাল মিয়া। রাহুলরা চার বোন এক ভাই। রাহুল বলললো 'বোনরা আমাকে ফুটবল খেলতে দিতে চাইতেন না। আমি সকাল ৬ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত সবজির দোকানে কাজ করতাম। ৫০ টাকা করে পেতাম। বিকেলে ফুটবল প্র্যাকটিস করতাম। আমাদের ওখানে নূর ইসলাম ফুটবল একাডেমি। স্যারের কাছে একদিন গিয়ে বললাম ভর্তি হতে চাই। স্যার আমাকে বলেছিলেন ৬০০ টাকা নিয়ে এসে ভর্তি হয়ে যাবে। আমি টাকা এনে ভর্তি হয়েছিলাম।'
রাহুলদের স্যার মানে ওই একাডেমির কোচ। ঢাকার ফুটবলে আবাহনীতে খেলা সাব্বির আহমেদ পলাশের হাত ধরেই রাহুলের মতো আরো ৭-৮ জন কিশোর মাদকের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে ফুটবলে যোগ দিয়েছে। এ জন্য কোচ পলাশকে হুমকি ধামকিও সহ্য করতে হয়েছে। রাহুলকে কেন ফুটবলে নিয়ে এলেন জন্য তার বোন কোচের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দিয়েছিলেন।
রাহুলের ওই গ্রামের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে অনেকে ওই গ্রামের লোক সেটার পরিচয়ও দিতে চান না। রাহুল বললো, 'আমাদের মতো চার-পাঁচটি পরিবার আছে যারা এই মাদকের থেকে মুক্ত আছে। আমরা গ্রামটাকে এমন করতে চাই যাতে মানুষ গর্ব করে ওই গ্রামের কথা বলে।'
শুরুতে খেলার সুযোগ পেত না রাহুল। 'আগে আমি খেলার সুযোগ পেতাম না। আমাকে কেউ নিত না। পাশে ঁদাড়িয়ে প্র্যাকটিস দেখতাম। প্রতিদিন দেখতে যেতাম। খালি পায়ে খেলতাম। স্যার বললেন- বুট কিনে মাঠে এসো। প্র্যাকটিস করো। এভাবে আস্তে আস্তে প্র্যাকটিস করি। ৪-৫ বছর আগে খেলা শুরু করি। একাডেমির সবচেয়ে বড় ম্যাচ আমি খেলেছি। অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে জোর করে আমাকে নামাতো। আমার আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে। আউটার স্টেডিয়ামে এফসি ইউনাইটেডের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৪ একাডেমি কাপে খেলেছি। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছে।'
নিজেদের স্কুলকে পুরো বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন দেখতে চায় রাহুল 'আমরা প্রথম পর্বে সব কটি ম্যাচ জিতে এসেছি। এখন চূড়ান্ত পর্বেও সব ম্যাচ জিতে পুরো বাংলাদেশের সেরা হতে চাই।'