বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

অখেলোয়াড় ‘সংগঠক’দের দিয়ে সিজেকেএস অ্যাডহক কমিটি, ক্রীড়াঙ্গনে তীব্র ক্ষোভ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫০ অপরাহ্ন

অখেলোয়াড় ‘সংগঠক’দের দিয়ে সিজেকেএস অ্যাডহক কমিটি, ক্রীড়াঙ্গনে তীব্র ক্ষোভ

দেশের পট পরিবর্তনের পর সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) কার্যনির্বাহী কমিটিও ভেঙে দেয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ক্রীড়াঙ্গনের বাইরের লোকদের নিয়ে গঠন করলো অ্যাডহক কমিটি। যেটি নিয়ে চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকদের মাঝে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে অ্যাডহক কমিটিতে স্থান পাওয়াদের কারও চট্টল ক্রীড়াংগনের সাথে ন্যুনতম সম্পর্ক নাই।

জেলা প্রশাসক এবং জেলা ক্রীড়া অফিসার পদাধিকারবলে সিজেকেএস অ্যাডহক কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিব। ছাত্র প্রতিনিধি নিয়েও কিছু বলার নাই।

ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে এসেছেন ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু তার পরিচয় কি জানেন? তিনি পতিত স্বৈরাচার এর দোসর, গত মাসে আটক হয়ে কারারুদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন চেয়ারম্যান (ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়ন) এর ছোট ভাই। বড় ভাই শাহিন আর তিনি (ইফতেখার) মূলত চামড়া ব্যবসায়ী, দুবাইতে যার রয়েছে বেশ কয়েকটি হোটেল। তার পার্টনার সিলেট পৌরসভার সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান। যিনি কোনদিন একটি পাড়ার টিমও চালাননি, তিনি কিভাবে সিজেকেএস’র মত একটি এত বড় ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব পেলেন? এই প্রশ্ন চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকদের।

খেলোয়াড় কোটায় জায়গা পয়েছেন কিশোরগঞ্জের মানুষ (রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মীয়), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান জালাল। তিনি নাকি বিনয়ের সাথেই একজনকে বলেছেন, আমি থাকি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে- আমি কিভাবে সিজেকেএস’র কাজ করবো।

কোচ হিসেবে রিফাত বিন আনোয়ার এর নাম দেখা গেলে অবাক বিষ্ময়ে এক প্রথিতযশা ফুটবল কোচ ক্ষোভের সাথেই বলেন- চট্টগ্রামে ৩০/৩৫ জন ‘সি’ বা ‘বি’ লাইসেন্সধারী ফুটবল কোচ আছেন আর লেভেল ‘ওয়ান’ বা ‘টু’ করা ক্রিকেট কোচও আছেন ৩০ জনের মত, অথচ রিফাত বিন আনোয়ার নামটি কেউই চিনেন না।

সিজেকেএস অ্যাডহক কমিটিতে সবচেয়ে হতাশাজনক নামটি হচ্ছে ক্রীড়া সাংবাদিক কোটায় ইবনে মীর। যে কোনদিন এক লাইনও স্পোর্টস রিপোর্ট লিখে নাই বলে জানান চট্টগ্রামের সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক সাইফুল্লাহ চৌধুরী। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, সে ক্রীড়া সাংবাদিক কোটায় কিভাবে জায়গা পায়? প্রতারণা করে কমিটিতে এসেছেন- সরাসরি বলেছেন দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই বর্ষীয়ান মিডিয়া কর্মী। তাকে ক্রীড়াঙ্গনে কেউই চিনেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যারা চট্টগ্রামে পেশাদার ক্রীড়া সাংবাদিক আছি তাদের মধ্যে এ নামটি কখনো ছিলনা।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ক্রীড়া সাংবাদিক বলতে পাঠক বা দর্শকরা জাকির হোসেন লুলু, এ জেড এম হায়দার, তাপস বড়ুয়া রুমু, দেবাশীষ বড়ুয়া, সাইফুল্লাহ্ চৌধুরী (সিজেকেএস কাউন্সিলর), সুলতান মাহমুদ সেলিম, নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির কিরণ, আরিফুল হকদেরকেই চিনে। আরো দুয়েকজন জাতীয় পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আছেন যারা মাঝে মাঝে বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্ট কাভার করেন। কিন্তু ইবনে মীরকে কখনো ক্রীড়াঙ্গনে দেখা যায়নি। তাহলে তিনি আসলেন কিভাবে?

তিনি প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ভয়াবহ জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেকে ক্রীড়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে সিজেকেএস অ্যাডহক কমিটিতে জায়গা জবরদখল করেছে। ফেনীর ছেলে চট্টগ্রামে পড়া-লেখা করলেও খেলাধূলার ধারে-কাছেও ছিলেন না কোনদিন। বছর দুয়েক আগে সাংবাদিকতায় যোগ দিলেও স্পোর্টস রিপোর্টিংয়ে কখনো এক লাইনও লিখেনি। কিন্তু কত বড় জালিয়াত হলে তিনি (ইবনে মীর) এত বড় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে ক্রীড়া সাংবাদিক কোটায় চট্টগ্রাম জেলার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া সংস্থায় নিজেকে তালিকাভুক্ত করতে পারে!

জানা গেছে, স্বৈরাচারের দোসর এক ধান্ধাবাজ, খোলস পাল্টে এখন গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হয়ে নিজের সিন্ডিকেট বড় করার জন্য তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।

আর যারা তাদের নাম অনুমোদন করেছেন তারা কি একবারও যাচাই করার প্রয়োজন মনে করেননি যে, তারা ঐ পদে যাওয়ার মতো যোগ্য কিনা। অন্তত: সিজেকেএস সভাপতি (জেলা প্রশাসক) বা এডিসি বা চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের মানুষগুলোর সাথে কথা বলে তো তাদের ব্যাপারে খবর নিতে পারতেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা তো আছেই। যে ব্যক্তিকে ক্রীড়াঙ্গনের কেউই চিনেনা, তাকে দিয়ে চট্টগ্রামের এত বড় ক্রীড়াঙ্গনের কি কাজ হবে? সিজেকেএস’র শতাধিক ক্লাব-সংগঠনের আড়াই শতাধিক কাউন্সিলর বা শত শত নিবেদিতপ্রাণ ক্রীড়া সংগঠক লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। বিষয়টি মাননীয় ক্রীড়া উপদেষ্ঠা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেবে না দেখলে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন ধ্বংসের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুমের বিপক্ষে গণ বিপ্লব-অভ্যুথ্থানের ভয়াবহ পরিণতি তা আমরা মাত্র ৬ মাসেই ভুলে গেলাম? স্বৈরাচারী শোষণে জর্জরিত আর বঞ্চিতরা যেখানে সম্মানিত হওয়ার কথা সেখানে প্রতারক আর সুবিধাবাধীরা যদি ক্রীড়াঙ্গনের উপরও ছড়ি ঘোরায় তাহলে স্থবির চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন আর আলোর মুখ দেখবে কিনা সন্দেহ। এ কমিটি বাতিলের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুছসহ দেশের অভিভাবক উপদেষ্টামন্ডলীরও বিবেচনা করার অনুরোধ চট্টগ্রামের ক্রীড়মোদী মহলের।


সর্বশেষ

উপরে নিয়ে চলুন