বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সাবাস বাংলাদেশ! ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে রেকর্ড গড়ে সিরিজ জয় টাইগারদের

দেশ স্পোর্টস ডেস্ক

১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন

সাবাস বাংলাদেশ! ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে রেকর্ড গড়ে সিরিজ জয় টাইগারদের

প্রতিপক্ষের নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাদের বিপক্ষেই পুঁজি মাত্র ১২৯ রানের; তাও টি-টোয়েন্টিতে! এত কম রান নিয়েও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ, তা হয়তো ভক্তদের অনেকেই ভাবেননি। তবে কারো কারো মনে আশার আলো জ্বলছিল প্রথম টি-টোয়েন্টি দেখার পর থেকে। শেষ পর্যন্ত প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো আরও একটি দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বোলিং নৈপুণ্যে ক্যারিবীয়দের ১০২ রানে অলআউট করে দিয়েছে বাংলাদেশ। ২৭ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ (২-০) নিশ্চিত করেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এই প্রথম কোনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলো টাইগাররা।

২০১৮ সালের পর টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। দেশের বাইরে ২০২২ সালের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।

১৬তম ওভারে প্রথম দুই বলে দুই ছক্কা মারেন রস্টন চেজ। প্রথমটি স্কুপ করে, পরেরটি ফুল টসে স্ট্রেট দিয়ে। ১৬ রান দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ তার এই ওভারে। তাতে ম্যাচটাও অনেকটা ঘুরে যায় স্বাগতিকদের পক্ষেই। তবে, সেটাকে বাংলাদেশের দিকে ফিরিয়ে আনতে সময় নেননি লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। পরপর দুই বলে ফেরান চেজ এবং গুদাকেশ মোতিকে। চেজ হয়েছেন বোল্ড। আর বাউন্ডারি লাইনে শেখ মাহেদিকে ক্যাচ দেন মোতি। 

পরের ওভারেই আলজারি জোসেফকে কট এন্ড বোল্ড করেন তানজিম সাকিব। অনেকটা চোখের পলকে ৮৯ রানে ৬ উইকেট থেকে স্কোর হয়ে যায় ৯০ রানে ৯ উইকেট। তাসকিন নিয়েছেন শেষ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামল ১০২ রানে। ২৭ রানের জয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। 

১২৯ রানের স্বল্প পুঁজি থেকেও ম্যাচ নিজেদের করে আনার পুরো কৃতিত্বটাই এদিন পাচ্ছেন বোলাররা। শুরুতে তাসকিন আহমেদ এবং শেখ মেহেদি হাসান নতুন বলে নিজেদের কাজটা একেবারেই ঠিকঠাক করেছেন। এরপর সেটাকে ধরে রেখেছিলেন তানজিম সাকিব। আগের ম্যাচে বেশ খরুচে বোলিং করলেও এদিন ছিলেন নিয়ন্ত্রিত। রিশাদের জাদুকরী ১৭তম ওভারটা বাংলাদেশের জয় এনে দেয় একেবারেই হাতের নাগালে। আর শেষটা করেছেন এই ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ। 

হাসান মাহমুদের ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি পেয়েছিলেন ব্রেন্ডন কিং। পরের ওভারেই শেখ মাহেদিকে এক চার আর এক ছক্কায় ঝড়ের আভাস দেন জনসন চার্লস। অবশ্য সেটা আর হয়নি। তৃতীয় ওভারেই জোড়া উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম বলেই দারুণ এক লেংথ ডেলিভারিতে কিংকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানালেন তাসকিন। ৫ বলে ৮ রানে ফিরলেন। শেষ বলে ফ্লেচারকেও উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানালেন। ৪ বলে শূন্য রানে ফিরলেন ফ্লেচার।

চতুর্থ ওভারে এক বাউন্ডারি হজম করলেও জনসন চার্লসকে এলবিডব্লিউতে ফেরান শেখ মাহেদি। এরপরেই স্লিপে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নিকোলাস পুরান। সপ্তম ওভারে তানজিম সাকিবের বলে স্লিপে আঙুলের ডগায় থাকা রভম্যান পাওয়েলের ক্যাচ ছেড়ে দেন সৌম্য। সেই আক্ষেপ অবশ্য বাড়েনি খুব একটা। পরের ওভারেই হাসান মাহমুদের বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ডেঞ্জারম্যান পাওয়েলকে ফেরান মিরাজ। 

রোমারিও শেফার্ডকে শুন্য রানে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তানজিম সাকিব। ৪২ রানে ৬ উইকেটের পতন। এখান থেকেই অবশ্য উইন্ডিজদের জয়ের দিকে নিতে শুরু করেন চেজ-আকিল জুটি। ৮ম থেকে ১৫তম ওভারে কেবল একটিই বাউন্ডারি পেয়েছিল স্বাগতিকরা। তারমাঝেও অবশ্য উইকেট না পাওয়ার হতাশা ছিল প্রবল। বিশেষ করে রস্টন চেজের টানা দুই ছক্কা চাপেই ফেলে দেয় বাংলাদেশকে। কিন্তু রিশাদ, তানজিম সাকিব আর তাসকিনরা ১২ বলের মাঝে নিলেন ৪ উইকেট। তাতেই ২০১৮ সালের পর প্রথম এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সিরিজ জয় টাইগারদের। 

এর আগে ব্যাট করতে নেমে আরও একবার বিপর্যয় দেখেছে বাংলাদেশ। আর্নেস ভ্যালি স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে একের পর এক ব্যাটারদের আসা-যাওয়া। ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ওপর চেপে বসেছিল উইন্ডিজ বোলিং লাইনআপ। দলীয় রান ৫০ পেরুবার আগেই নেই দলের ৪ উইকেট। আরও একবার লাল-সনুজের ত্রাতা হয়ে আসেন লোয়ার মিডল অর্ডারের শামীম পাটোয়ারী। তার ২ চার ও ২ ছক্কায় ১৭ বলে ৩৫ রানের ইনিংসটাই শেষ অব্দি বাংলাদেশের বোলারদের খানিক লড়াই করার পুঁজি এনে দেয়। 

ম্যাচের তৃতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আকিল হোসেনের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ৩ রান করে ফেরেন লিটন দাস। চতুর্থ ওভারে আরেক স্পিনার রোস্টন চেজ আক্রমণে এসেই পেয়েছেন তানজিদ হাসান তামিমের উইকেট। সাধারণ সুইং বুঝতে পারেননি তানজিদ। হয়েছেন বোল্ড। পরের ওভারেই এলো এক চার এবং এক ছক্কা। মেহেদি হাসান মিরাজ দিলেন আগ্রাসী হওয়ার ইঙ্গিত। পরের ওভারেও ফের মিরাজ পেয়েছেন চার। 

মিরাজের সঙ্গে ২৮ রানের জুটির পর রানআউট হন সৌম্য সরকার। এই আউট দিয়েই পরপর ৩ ওভারে ৩ উইকেটের পতন দেখেছে বাংলাদেশ। পরের ওভারে আলজারি জোসেফকে পুল করতে গিয়ে আউট হন মিরাজ। তার পরের ওভারে গুদাকেশ মোতির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন রিশাদ হোসেন। এরপরেই আসেন বৃষ্টি। তার আগে ১১.৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ হয় ৬২ রান। 

বৃষ্টির পর জাকের আলী অনিকের ২০ বলে ২১ রানের ক্যামিও আর শামীম পাটোয়ারীর ১৭ বলে ৩৫ রান বাংলাদেশকে এনে দেয় ১২৯ রানের পুঁজি। বোলাদের নিখুঁত পারফরম্যান্সের দিনে সেটাই জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য। 


সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ:
২০ ওভারে ১২৯/৭ (শামীম ৩৫*, মিরাজ ২৬, জাকের ২১, সৌম্য ১১, মেহেদী ১১, তানজিম ৯; মোতি ২/২৫, আকিল ১/১৬, আলজারি ১/২১, ম্যাকয় ১/৩২, চেজ ১/৮)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৮.৩ ওভারে ১০২ (চেজ ৩২, আকিল ৩১, চার্লস ১৪, কিং ৮,পাওয়েল ৬, পুরান ৫; তাসকিন ৩/১৬,রিশাদ ২/১২, মেহেদী ২/২০, তানজিম ২/২২, হাসান ১/২৩)।
ফল: বাংলাদেশ ২৭ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: শামীম হোসেন (বাংলাদেশ)
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-০ তে এগিয়ে।


সর্বশেষ

উপরে নিয়ে চলুন