বিনা উইকেটে ৯৭ রান। সেখান থেকে ১১০ তুলতেই নেই ৪ উইকেট। দারুণ শুরুর পরও হারের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ভারতীয় বোলাররা বেশ চেপে ধরেছিলেন শেষদিকে এসে।
তবে ভারতের শেষ রক্ষা হয়নি। এক বল হাতে রেখে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ৬ উইকেটের এই জয়ে ফাইনালের পথে এক পা দিয়ে ফেলেছে দাসুন শানাকার দল।
শেষ ৬ ওভারে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ৬৪। টানা দুই ওভারে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে লড়াই বাঁচিয়ে রাখেন ভানুকা রাজাপাকসে। তিন ওভারে ৩৩ যখন দরকার, শানাকা হাঁকান একটি ছক্কা।
ফলে শেষ ১২ বলে শ্রীলঙ্কার জয়ের জন্য লাগে ২১ রান। ১৯তম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারকে তৃতীয় আর চতুর্থ বলে টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন লঙ্কান অধিনায়ক শানাকা। শেষ ওভারে থাকে ৭ রান।
অর্শদীপ সিং চাপের মুখে দারুণ বোলিং করেন। প্রথম চার বলে দেন মাত্র ৫। এমন মুহূর্তে পঞ্চম বলটি ব্যাটে লাগাতে পারেননি শানাকা, তবে রানের জন্য দৌড় ঠিকই দেন। উইকেটরক্ষক রিশাভ পান্ত বল হাতে নিয়ে ননস্ট্রাইকে থ্রো করেন। সেখান থেকে আরও এক রান বাই। বাই ২ রান নিয়ে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচটিতে জয়ের উল্লাসে মাতে লঙ্কানরা।
লক্ষ্য ছিল ১৭৪ রানের। প্রথম দুই ওভারে দেখেশুনে শুরু করেন লঙ্কান দুই ওপেনার কুশল মেন্ডিস আর পাথুম নিশাঙ্কা। তোলেন মাত্র ৮ রান। তবে কিছুটা সেট হয়েই তাণ্ডব শুরু করেন তারা।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে শ্রীলঙ্কা বিনা উইকেটে তোলে ৫৭ রান। জুটিটা টিকেছে ১১ ওভার পর্যন্ত। ১২তম ওভারে ভারতীয় সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটান ইয়ুজবেন্দ্র চাহাল। জোড়া উইকেট তুলে নেন ৪ বলের মধ্যে।
মেন্ডিস-নিশাঙ্কার ৬৭ বলে ৯৭ রানের ঝোড়ো জুটিটি ভাঙে ওভারের প্রথম বলেই। ফিফটি হাঁকানোর পরই রিভার্স সুইপ করতে যান নিশাঙ্কা, ধরা পড়েন রোহিতের হাতে। ৩৭ বলে ৪ চার আর ২ ছক্কায় নিশাঙ্কা করেন ৫২।
এর দুই বল পর সুইপ করতে গিয়ে টপএজ হন নতুন ব্যাটার চারিথা আসালাঙ্কা (০)। বিনা উইকেট থেকে ৯৭ রানে ২ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। এরপর দানুশকা গুনাথিলাকাও সুবিধা করতে পারেননি। ৬ বল খেলে মাত্র ১ রান করে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার হন তিনি।
পরের ওভারে চাহাল ফেরান সেট ব্যাটার কুশল মেন্ডিসকে। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তিনি এলবিডব্লিউ করেন কুশলকে। ৩৭ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায় ৫৭ রানে সাজঘরে ফেরেন লঙ্কান ওপেনার।
শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার যেভাবে শুরু করেন, তাতে ভারত পাত্তাই পাচ্ছিল না। ৯৭ রানের উদ্বোধনী জুটিতে সহজ জয়ের ভিত গড়ে দেন তারা। কিন্তু সেখান থেকে ১৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় পড়ে শ্রীলঙ্কা।
তবে ভানুকা রাজাপাকসে আর দাসুন শানাকা পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৬৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। শানাকা ১৮ বলে ৩৩ আর রাজাপাকসে ১৭ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে শুরুতে ভারতের ১২ রানে ছিল না ২ উইকেট। বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে দারুণ এক ইনিংস খেলে দেন রোহিত শর্মা। কিন্তু তিনি আউট হওয়ার পরই ফের ভারতকে চেপে ধরেন লঙ্কান বোলাররা।
১৩তম ওভারে ২ উইকেটে ছিল ১১০ রান। সেখান থেকে ৮ উইকেটে ১৭৩ রানের পুঁজি পেলো ভারত। রোহিতের ঝড়ো ফিফটির পরও প্রত্যাশিত সংগ্রহ পাওয়া হয়নি দলটির।
দুবাইয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টসভাগ্য সহায় হয়নি ভারতের। টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা।
শানাকার এই সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করতে শুরু থেকেই ভারতকে চেপে ধরেন লঙ্কান বোলাররা। ১২ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে রোহিত শর্মার দল। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে থিকশানার ঘূর্ণিতে এলবিডব্লিউ হন লোকেশ রাহুল (৬)। রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি।
পরের ওভারেই বিরাট কোহলি ফেরেন শূন্য রানে। দিলশান মধুশঙ্কাকে ক্রস খেলতে গিয়ে পুরো লাইন মিস করে বোল্ড হন তিনি। বিপদে পড়ে ভারত।
সেই বিপদ দারুণভাবে কাটিয়ে উঠেন রোহিত শর্মা। সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৯৭ রানের জুটি গড়েন ভারতীয় অধিনায়ক, ৩২ বলেই করেন ফিফটি।
নবম ওভারেই অবশ্য ফিরতে পারতেন রোহিত। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে এক্সট্রা কভারে হাঁকাতে গেলে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ নিতে যান শানাকা। কিন্তু এক হাতে বল পেলেও লঙ্কান অধিনায়ক কঠিন সে ক্যাচ রাখতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৪১ রানে বেঁচে যান রোহিত।
সেই রোহিত ফিফটি করার পরও অনেকটা সময় চালিয়ে খেলেছেন। অবশেষে ইনিংসের ১৩তম ওভারে তাকে সাজঘরের পথ দেখান পেসার চামিকা করুনারত্নে। ৪১ বলে গড়া রোহিতের ৭২ রানের ইনিংসে ছিল ৫ চার আর ৪ ছক্কার মার।
রোহিত ফেরার পর দ্রুত আরও একটি উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। ১৫তম ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই মারকুটে সূর্যকুমার যাদবকে ফেরান লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তার বাউন্সি ডেলিভারি শর্ট থার্ডম্যান দিয়ে তুলে মারতে গিয়েছিলেন সূর্য।
কিন্তু টাইমিং না হওয়ায় ক্যাচ উঠে যায়। ২৯ বলে ৩৪ করে ফেরেন এই হার্ডহিটার। ৯ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে ভারত।
হার্দিক পান্ডিয়া শুরুটা করেছিলেন ভালো। ১৮তম ওভারে শানাকাকে বড় এক ছক্কাও হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ওভারে তাকে তুলে নেন লঙ্কান অধিনায়ক। ডিপ মিডউইকেটে হার্দিক ধরা পড়েন ১৩ বলে ১৭ করে।
ওই ওভারে আরও একটি উইকেট পড়তে পারতো। শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন নতুন ব্যাটার দীপক হুদা। কিন্তু রিপ্লে দেখে বাউন্সি ডেলিভারিটি ‘নো’ ডাকেন আম্পায়ার। ওই জীবন পেয়েও অবশ্য কাজে লাগাতে পারেননি দীপক।
পরের ওভারে লেগস্টাম্প উম্মুক্ত করে মধুশঙ্কাকে মারতে গিয়ে বোল্ড হন ডানহাতি এই ব্যাটার (৪ বলে ৩)। এক বল পর পান্তও বাউন্ডারিতে ক্যাচ হয়ে যান পুল খেলতে গিয়ে (১৩ বলে ১৭)। ১৯তম ওভারটিতে সবমিলিয়ে মাত্র ৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন মধুশঙ্কা।
চামিকা করুনারত্নের করা ইনিংসের শেষ ওভারে এক উইকেট হারালেও অশ্বিনের ছক্কায় ১২ রান তুলে নেয় ভারত। অশ্বিন ৭ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন।
মধুশঙ্কাই লঙ্কান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল। ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন বাঁহাতি এই পেসার।